Apan Desh | আপন দেশ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

দেশে ক্যান্সারে দিনে মৃত্যু ৩১৯

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দেশে ক্যান্সারে দিনে মৃত্যু ৩১৯

প্রতীকী ছবি

দেশে দৈনিক গড়ে ৪৫৮ জন নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। আর মারা যাচ্ছে ৩১৯ জন। রোগের প্রকোপের তুলনায় দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। কমপক্ষে ৩২ ধরনের ক্যান্সারে এ দেশের মানুষ আক্রান্ত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। 

ক্যান্সার দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এ রোগের চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। দরিদ্র মানুষের পক্ষে ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষ করে আরোগ্য লাভ করা কঠিন। দেশের ধনীদের একটি বড় অংশ ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। আস্থা রেখে ক্যান্সার চিকিৎসা করা যায়, এমন প্রতিষ্ঠান দেশে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

২০২২ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান আছে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান ছাড়াও প্রতিটি দেশের পৃথক পরিসংখ্যানও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বলছে, বৈশ্বিকভাবে ক্যান্সারের বোঝা বড় হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ, কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে।

ক্যানসার-বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি ইন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক পারভীন শাহিদা বলেন, ‘ফাস্ট ফুড, বেশি চিনি বা বেশি লবণযুক্ত খাবার ক্যান্সারের কারণ। ধূমপায়ী বা যারা পান-জর্দা খান, তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। বায়ুদূষণ ক্যান্সারের কারণ। ভেজাল খাদ্য মানুষের ক্যান্সার বাড়ায়। আমরা এ-ও দেখেছি, অল্প বয়সে বিয়ে করা নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। বছরে ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন। মৃত্যুও দেখা যায় পুরুষের বেশি। মৃত রোগীদের হিসাব বাদ দিয়ে দেশে এখন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৪৬ হাজারের কিছু বেশি।

বাংলাদেশে খাদ্যনালির (গলবিল থেকে খাদ্যনালি পর্যন্ত) ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। দেশে প্রধান পাঁচটি ক্যান্সারের মধ্যে আছে-খাদ্যনালি, ঠোঁট ও মুখ, ফুসফুস, স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার। পুরুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালির ক্যান্সার বেশি, আর নারীর ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার বেশি। তবে মৃত্যু বেশি হচ্ছে খাদ্যনালির ক্যান্সারে।

বাংলাদেশে রোগভিত্তিক কোনো জাতীয় জরিপ নেই। ক্যান্সারে কত মানুষ আক্রান্ত হন, কত মানুষ মারা যান, কোন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি- এসব বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। বিধায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া অনুমিত পরিসংখ্যানই ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন>> এখনো হয়নি জাতীয় ক্যানসার নিবন্ধন

ক্যানসার-বিশেষজ্ঞরা বলেন, আদর্শ ক্যান্সার চিকিৎসা হয় দলগতভাবে। চিকিৎসকদের এই দলে থাকেন ওষুধবিশেষজ্ঞ, শল্যবিদ, রেডিও অনকোলজিস্টসহ আরও অনেকে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াররফ হোসেন বলেন, ক্যান্সারের জন্য দরকার সমন্বিত চিকিৎসাকেন্দ্র। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে এই কেন্দ্রে থাকবে কেমোথেরাপি, সার্জারি ও রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য এ রকম একটি করে ক্যান্সার সেন্টার থাকা দরকার। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। মানসম্পন্ন চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে ১৭০ ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা দরকার। কিন্তু আছে মাত্র ২২টি। এর সিংহভাগই রাজধানী ঢাকায়।

সারাদেশের দরিদ্র রোগীরা চিকিৎসার জন্য সরকারের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন। ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে সারা বছর রোগীর ভিড় থাকে। সহজে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। অনেক রোগীকে বিশেষ কোনো থেরাপি বা সার্জারির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে চিকিৎসা নেয়া থেকে বিরত থাকেন। অনেকে রাজধানীতে থাকার ব্যয় বহন করতে পারেন না। অনেক অর্থ ব্যয় করে ঢাকায় এসেও চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফেরত যান। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। তাই অনেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন। আবার দেশের চিকিৎসায় আস্থা না থাকায় বিত্তশালীরা বিদেশে চিকিৎসা নেন।

এই আস্থাহীনতার কথা গত সপ্তাহে জনসমক্ষে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি গত ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দেশের চিকিৎসার ওপর মানুষের আস্থা নেই। আস্থাহীনতার কারণে মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি করে দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চান নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

আপন দেশ/এসএমএ

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়