Apan Desh | আপন দেশ

মিশ্র ফল চাষে অনন্য তোয়ো ম্রো

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মিশ্র ফল চাষে অনন্য তোয়ো ম্রো

ছবি : সংগৃহীত

মিশ্র ফলের বাগানের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন বান্দরবানের বাসিন্দা তোয়ো ম্রো। নিজের প্রচেষ্টায় ২০ একর জায়গার ওপর দেশি-বিদেশি মূল্যবান প্রজাতিসহ প্রায় ৮০ প্রজাতির মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ম্রো জনগোষ্ঠীকে বাগান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিবছর বিনামূল্যে বিভিন্ন ফলের চারা সরবরাহ করছেন, দিচ্ছেন পরামর্শ।

বান্দরবান জেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে সুয়ালক ইউনিয়নের বসন্ত ম্রো পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা তোয়ো ম্রো। পাহাড়ের মাটি ও প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে সেখানেই তিনি গড়ে তুলেছেন ফলের সাম্রাজ্য। 

তার মিশ্র ফলের বাগান ঘুরে দেখা যায়, থোকায় থোকায় ঝুলে আছে লাল-হলুদ রঙের বাউকুল, কাশ্মীরি কুল। আছে ভিয়েতনামী নারিকেল, মিষ্টি সফেদা, দার্জিলিং কমলা, চায়না কমলা, মল্লিকা আম, সূর্যডিম আম, চ্যাংনাই আম, জাপানি আম, লংকান গাছ (আঁশ ফল গাছ) ভিয়েতনামী বারোমাসী মাল্টা, ড্রাগন, আলু বকরা, কাটিমন আম, রেডকুইন আম, রবি লংগান (লাল) লাল কাঁঠাল, শান্তল, সরিফা, বিলাতি গাব, সিডলেস কুল, হানিভিউ আমসহ ৮০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফলের গাছ।

ফলদ বাগান করে তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, নিজের গ্রামের জুম চাষের বদলে ম্রো জনগোষ্ঠীকে বাগান চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন, নিজের বাগান থেকে প্রতিবছর বিনামূল্যে বিভিন্ন ফলের চারা সরবরাহ করেছেন। আবার চারারোপণ থেকে পরিচর্যা কীভাবে করতে হবে নিজের অর্থায়নে আগ্রহী চাষিদেরকে বিনামূল্যে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এলাকাবাসী সেজন্য তাকে নাম দিয়েছেন ‘ড্রাগন মাস্টার তোয়ো ম্রো’। 

আরও পড়ুন <> বিরল সূর্যগ্রহণে দিন হবে রাতের মতো

 

২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক পাওয়া তোয়ো ম্রো জানান, এই বাগান থেকে প্রতিবছর সব খরচ বাদে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। 

এ ছাড়া কৃষিতে অবদানের জন্য বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক সংগঠন থেকে ক্রেস্ট ও পুরস্কার দেয়া হয়েছে তাকে। বিভিন্ন কৃষি পদকও রয়েছে তার ঝুলিতে। ২০০৫ সালে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ও অনুপ্রেরণায় বাগান চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি।  

তোয়ো ম্রো জানান, তার বাগানে এখন সারা বছর কোনো না কোনো ফল থাকে। বাগানের চারাগাছে জৈব সার প্রয়োগের জন্য এ বছর আড়াই লাখ টাকার গোবর সার ক্রয় করেছেন, বাগানের পরিচর্যার জন্য শ্রমিকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছর ২০ লাখ টাকার মতো লাভ হয়। 

বসন্ত পাড়ার রুইতন ম্রো জানান, আট বছর আগে তোয়ো ম্রো’র পরামর্শে বাড়ি চারপাশে প্রায় ৫০০ আম গাছের কলম চারা লাগান। দুই বছরের মধ্যে এসব গাছে ফলন আসে।

এখন প্রতিবছর আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকার আম বিক্রি করছেন তিনি। তার বাগানেও আপেল কুল, সজিনা চারা লাগিয়েছেন। এখন আগের তুলনায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নিতে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এজন্য তোয়ো ম্রো ও কৃষি বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রুইতন ম্রো। 

জানা গেছে, তোয়ো ম্রো প্রায়সময় লামা, রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় গিয়ে দুর্গম এলাকার ম্রো গ্রামে গ্রামে ফলদ বাগান চাষ করার জন্য উঠান বৈঠক করে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করেন।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ্ নেওয়াজ বলেন, বান্দরবান জেলায় অনেক সফল ফলদ বাগান চাষি আছেন যারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা ও চাষাবাদ করে সফল হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন, তার মধ্যে তোয়ো ম্রো একজন। তিনি মিশ্র ফলদ বাগান করে সফল হয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে করতে অভিজ্ঞ হওয়ায় তার আশেপাশে অন্যান্য বাগান চাষিদেরকেও তার বাগান থেকে বিনামূল্যে চারা প্রদান ও পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়