Apan Desh | আপন দেশ

জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম নিবন্ধনে মূলহোতা কে? 

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ২৬ মার্চ ২০২৪

জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম নিবন্ধনে মূলহোতা কে? 

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদনের পর তা অনুমোদনে গোপন ওটিপি যায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন বা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে। ওটিপি অনুমোদন ছাড়া জন্ম নিবন্ধন অসম্ভব। তবে পাবনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম নিবন্ধনের ঘটনায় দায় অস্বীকার করছেন আহমেদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। ঘটনা অনুসন্ধানে মাঠে রয়েছে কমিটি, হয়েছে মামলা। বিব্রতকর এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলছে জেলা প্রশাসন।
 
স্থানীয়রা জানান, জন্ম নিবন্ধনের অপর নাম ভোগান্তি। নিবন্ধনে সার্ভার জটিলতাসহ হয়রানির নানা বিষয়ে বার বার অভিযোগ জানিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর মাঝেই সম্প্রতি পাবনার আহমেদপুর ইউনিয়ন থেকে জাস্টিন ট্রুডোর নামে একরাতে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ায় প্রশ্ন ওঠে সার্ভারের নিরপত্তা ও সামগ্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে।

কীভাবে জাস্টিন ট্রুডোর নামে জন্ম নিবন্ধন হলো?

ঘটনার মূলহোতা হিসেবে কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের নাম আলোচনায় রয়েছে। কিন্তু নিলয় ইউনিয়ন পরিষদের কেউই নন। তাহলে কীভাবে দিনের পর দিন ইউনিয়ন পরিষদে সচিব আওলাদ হোসেনের পেছনে বসেই কাজ করতেন নিলয়? আমতা আমতা উত্তর আওলাদ হোসেনের।

ঘটনা জানাজানির পর থেকেই আত্মগোপনে কম্পিউটার অপারেটর নিলয়। নিলয়ের এক স্বজনের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে নিলয় দায়ী করেন ইউপি সচিবকে।

নিলয় বলেন, অর্থের বিনিময়ে সচিব আওলাদ দীর্ঘদিন ধরে করছেন এ ভুয়া নিবন্ধন ব্যবসা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রউফও বিষয়টি জানেন। আমার কাছে ওটিপি আসে না, কর্তৃপক্ষের কাছেই যায়। সচিব আওলাদ যেগুলো নির্দেশনা দেন আমি সেগুলো নিয়েই কাজ করেছি। আমার নিজের কোন ক্ষমতা নেই। তারা কাজের বিনিময়ে আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দিতেন মাত্র। কোনটা বৈধ না অবৈধ নিবন্ধন এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আওলাদ সাহেবের বিকাশ লেনদেন যাচাইয়েও তার প্রমাণ মিলবে দাবি নিলয়ের।

ইউপি সচিব আওলাদ হোসেন বলেন, নিলয়কে সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব পরিষদের কাজে এনেছেন। কোন চুক্তি না থাকলেও সেই নিবন্ধন সংক্রান্ত কাজগুলো করতো। আমার মনে হয় আমি যখন বাথরুমে গিয়েছি তখন নিলয় ওটিপি চুরি করে এ কাজ করেছে। আবার সার্ভার হ্যাক করেও এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিকাশে টাকার লেনদেন জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত নয়।

এদিকে, জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চান তারা। স্থানীয় আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ কিছুতেই দায় এড়াতে পারেন না। নিলয়ের মতো একজন কম্পিউটার অপারেটর একাই গোপন ওটিপি জালিয়াতি করে এসব করেছে তা কেউ বিশ্বাস করবে না। এ ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। পাবনাবাসী হিসেবে আমরাও লজ্জিত। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ভুয়া জন্মনিবন্ধনকাণ্ডে বিব্রত প্রশাসনও। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবকে শোকজের পর সরেজমিন তদন্ত করেছে জেলা প্রশাসনের কমিটি। নিলয়কে আসামি করে মামলাও দায়ের হয়েছে সুজানগর থানায়। 

পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আমরা মামলাটি গুরুত্বে সঙ্গে তদন্ত করছি। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক আইনের আওতায় আনা হবে।

জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন কাণ্ডে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে জেলা প্রশাসনের কমিটি।

পাবনা জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত। তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে সরেজমিন তদন্ত করেছে। এর ওর উপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। 

আপন দেশ/এনআর/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়