Apan Desh | আপন দেশ

জালালের সম্বল একটি ঘোড়া, তাই চড়ে ভিক্ষা

ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

জালালের সম্বল একটি ঘোড়া, তাই চড়ে ভিক্ষা

ছবি: সংগৃহীত

ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করার কথা শুনলে প্রথমেই চমকে যেতে হয়। দ্বীপজেলা ভোলায় এমনই এক ভিক্ষুকের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

জামাল হোসেন ওরফে জালু নামের ওই ভিক্ষুক ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষা করে বেড়ান। স্ত্রী শাহিনুর বেগমকে নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর দিন কাটান এ ভিক্ষুক। সেই ঘরটিও তার নিজের নয়। এক আত্মীয় থাকতে দিয়েছেন। 

কোনো ঘর-বাড়ি না থাকলেও জালাল উদ্দিনের আছে একটি ঘোড়া। যে ঘোড়ায় চেপে ভিক্ষা করেন তিনি।

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের চর গঙ্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন জালু।  

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন জালাল। ফেরেন সন্ধায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ও টাকার জন্য সাহায্য চান। দিন শেষে যা মিলে তা দিয়েই স্বামী-স্ত্রী ও ঘোড়ার আহারের ব্যবস্থা করেন।

ঘোড়ায় চেপে জালাল উদ্দিনের ভিক্ষা করার বিষয়টি প্রথমে ভালোভাবে নিত না গ্রামবাসী। তবে তার অসহায়ত্ব দেখে এখন খুশি মনে ভিক্ষা দেন অনেকে।

কারণ, ষাটোর্ধ্ব বয়সী এই বৃদ্ধের চলাফেরার সামর্থ্য সেভাবে নেই। শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি।  জালাল উদ্দিন জানান, ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়াটি কিনে ভিক্ষায় নেমেছেন।  

তিনি বলেন, আমার সহায়-সম্বল কিছুই নেই। একটা গরু ছিল সেটি বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনেছি। সেই ঘোড়া নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যাই। যা পাই তা দিয়ে দুটো ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হয়। যখন টাকা মেলে না তখন না খেয়ে কাটাতে হয়।

জালুর স্ত্রীর শাহিনুর বেগম বলেন, অনেকেই সরকারি সাহায্য পায়, আমরা পাই না, কেউ আমাদের দেয় না।  

স্থানীয় বাসিন্দা মায়ানুর, হাজেরা, রশিদা ও কালাম বলেন, নদীতে ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন জালাল উদ্দিন। এক সময় স্ত্রীসহ ঢাকায় ঝাড়ুদারের কাজ করতেন জালাল। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় কর্মহীন হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে ফির আসেন নিজের গ্রামে। উপার্জনের কোন পথ না পেয়ে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। আগে হেঁটে ভিক্ষা করতেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘোড়া কিনে তাতে চড়ে ভিক্ষা শুরু করেন।

সাচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিবুল্লাহ বলেন, জালু অসহায় সেটি জানি। যখনই তার সঙ্গে দেখা হয় তখন তাকে সাহায্য করি।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, সাচড়া ইউনিয়নে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করছেন, এমন মানুষের কথা আমার জানা নেই। আমি বিষয়টির খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে সহযোগিতা করব। তিনি ভূমিহীন-গৃহহীন হয়ে থাকলে চেষ্টা করব তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়ার।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়