Apan Desh | আপন দেশ

সেপ্টেম্বরে ৪১ মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১৭:১১, ২ অক্টোবর ২০২৩

সেপ্টেম্বরে ৪১ মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে

ফাইল ছবি

ডলার সংকটে প্রবাসী আয়ে ধাক্কা লেগেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (এক টাকা সমান ১০৯ দশমিক ৫০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এটি গত প্রায় সাড়ে তিন বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আসা রেমিট্যান্স গত বছরের সেপ্টেম্বরে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ বা ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত মাসে দেশে যে প্রবাস আয় এসেছে তা গত আগস্টের তুলনায় এই আয় প্রায় ১৬ শতাংশ কম। আর ২০২০ সালের জুলাইয়ে আসা সবচেয়ে বেশি প্রবাস আয়ের হিসাব বিবেচনায় নিলে গত মাসে আয় কমেছে ৪৮ শতাংশের বেশি। প্রবাসী আয়ের এই পতনকে বড় দুঃসংবাদ বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি থাকলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে, তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দাম আট থেকে ১০ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে আলোচিত সময়ে সাত ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক; বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

এর আগে গত জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (এক দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগস্টে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের প্রবাস আয়। গত জুন মাসে রেকর্ড ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (দুই দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। একক মাস হিসেবে যেটি ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল।

আরও পড়ুন <> ডলারে কারসাজি, ১০ ব্যাংকের জরিমানা

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চসংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন দুই হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এযাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, রেমিট্যান্স কম আসার কারণগুলো খতিয়ে দেখার জন্য আমাদের আরও কিছু সময় দরকার।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকারস বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাফেদা ডলারের যে দাম ঠিক করছে, তা সবসময় মানা হয় না। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোকে ডলারের বেঁধে দেয়া দাম মেনে চলতে চাপ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েকটি ব্যাংক বেশি দাম দেয়ায় সমালোচনার শিকারও হয়েছে। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোকে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর মেনে চলতে হচ্ছে। মূলত এই কারণেই সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে।' তিনি বলেন, 'এটি আমরা বারবার বলে আসছি। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম কম হওয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।' এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রেমিট্যান্স কমলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে যাবে।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, 'দুই-এক মাসের রেমিট্যান্সের ধারা দেখেই রেমিট্যান্স কমছে, তা বলা যাবে না। লম্বা সময় রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গেছে। তা ছাড়া যারা অবস্থাসম্পন্ন প্রবাসী তারা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, কেউ কেউ কম পাঠাচ্ছেন। বিনিময় হার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনও রেমিট্যান্সকে প্রভাবিত করছে।’ 

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘খোলাবাজার ও ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামের পার্থক্য আবার বেড়ে আট থেকে ১০ টাকা হয়ে গেছে। এ কারণে হুন্ডির প্রবণতা বাড়ছে। বাজারে টাকার প্রতি আস্থা বাড়ছে না। কেউ পরে আরো বেশি টাকা পাওয়ার আশায়  রেমিট্যান্স কম পাঠাচ্ছে।’

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়