Apan Desh | আপন দেশ

পাবনায় ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসুতির মৃত্যু, হাসপাতাল সিলগালা

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

পাবনায় ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসুতির মৃত্যু, হাসপাতাল সিলগালা

ছবি: আপন দেশ

পাবনার আইডিয়াল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যেই দুই প্রসূতির মারা গেছে। নিষিদ্ধ স্যালাইন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জেকশন পুশ করা হয় প্রসুতিদের শরীরে। নার্স দিয়ে করানো হয়েছে সিজার। এছাড়াও নানা অব্যবস্থাপনার কারণেই প্রসুতিদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সিলগালা করা হয়েছে হাসপাতাল। জব্দ করেছে নিষিদ্ধ-মেয়াদোতীর্ণ ওষুধ।

চিকিৎসকদের দাবি, রোগীর অপারেশন পরবর্তী কোনো অবস্থাই জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে ওই হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে এসব জানান পাবনার সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান। তবে তদন্তের আগেই চিকিৎসকের দায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। 

সূত্র বলছে, রোববার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে বাচ্চা ডেলিভারির জন্য আইডিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন স্বপ্না খাতুন (২৬)। সে আটঘরিয়া উপজেলার বাসিন্দা। কিছুক্ষণ পরই কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার ঘোষপুর গ্রামের ইনছানা খাতুন (৩২) ভর্তি হয়। বিকেল পৌনে ৪ টায় ডা. লিপি খাতুন প্রসূতি স্বপ্না খাতুনের সিজার করায়। বিকেল ৫ টার দিকে ডা. লিজা খাতুন অপারেশন সম্পন্ন করেন ইনছানা খাতুনের। তখনও রোগীদের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এর চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা পরই দুজনেই মারা যান।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন রোগীরা। অপারেশন শেষ করে লোকবলের অভাবে বেডে দিতে দেরি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর বেডে নেয়ার পরই তাদের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। হাসপাতালের সেবিকারা নিষিদ্ধ স্যালাইন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জেকশন পুশ করলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। অথচ কোনো চিকিৎসককে ডাকেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে স্বপ্না খাতুন মারা যান। এরপরই ইনছানাকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করলে পথেই তার মৃত্যু ঘটে।

ইনছানার খাতুনের মা আসমা বেগম বলেন, আল্ট্রাসনো করালে চিকিৎসক দ্রুত আমার মেয়েকে সিজার করতে বলেন। এরপর আইডিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে অপারেশন করে এক ঘন্টারও বেশি সময় অপারেশন রুমেই ফেলে রাখে। বেডে দিতে বললে লোক না থাকায় পরে দেয়া হবে বলে জানায়। এরপর বেডে নেয়ার পরই আমার মেয়ে বেঁকে বেঁকে উঠতে থাকে। ঘেমে অস্থির হয়ে যায়। দেখতে দেখতেই অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। অথচ কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনা হয় নাই। 
তিনি জানান, স্যালাইন দেয়া ছিলো, নার্সরা কয়েকটা ইঞ্জেকশন দেয়। তাতেও ঠিক নাহলে রাজশাহী মেডিকেলে নিতে বলে। কিন্তু রাস্তায়ই আমার মেয়ে মারা যায়। সঠিক চিকিৎসা না দেয়ার কারণে আমার মেয়ে মারা গেছে। এখন এ বাচ্চাগুলোর কি হবে, কে মানুষ করবে? আমি এর বিচার চাই।

স্বামী মাহবুবুল আলম রুবেল জানান, বার বার ডাক্তার ডাকতে বলেছি, ওরা ডাক্তার না এনে নার্স দিয়ে চিকিৎসা দিয়েছে। যখন আমার ওয়াইফ মারা যাচ্ছে তখন বলে রাজশাহী নিতে। চিকিৎসার অভাবে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। 

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিষিদ্ধ স্যালাইন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জেকশন কিভাবে পুশ করা হলো রোগীর গায়ে? সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের ভূমিকা কি- এ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তবে চিকিৎসকদের দাবি, রোগীর অপারেশন পরবর্তী কোনো অবস্থাই জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বপ্না খাতুনের সিজার করা চিকিৎসক ডা. লিপি জানান, রোগীর আগেও অপারেশন হয়েছিলো। এটিই প্রথম নয়। এ অপারেশনের পূর্বে তার কোনো স্বাস্থ্যগত জটিলতা ছিলো না। রিপোর্ট অনুযায়ী উনি অপারেশনের জন্য ফিট ছিলেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই অপারেশন সম্পন্ন হয়। তবে অপারেশন পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। হাসপাতালের কেউই তাকে এবিষয়ে জানায়নি।
ইনছানার সিজার করা চিকিৎসক ডা. লিজা জানান, পেশেন্টের বাচ্চা পেটের ভেতরে পায়াখানা করেছিলো। যার কারণে ইমার্জেন্সি সিজার করানো হয়। তবে এর জন্য রোগীর কোনো ঝুঁকি ছিলো না, হয়তো বাচ্চার প্রব্লেম হতে পারতো। কিন্তু বাচ্চা সুস্থ্যই আছে। রোগীকে রাজশাহীতে রেফার্ড করলেও আমাকে এব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি।

এদিকে পরিদর্শনে এসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেলে চিকিৎসা অনুপযোগী সরঞ্জাম জব্দের পাশাপাশি ওই হাসপাতাল সিলগালা করেন সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান। তবে তদন্তের আগেই চিকিৎসকের কোনো দায় নেই বলে সাফাই গেয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, দুজন রোগীর একজনের তথ্য হাসপাতালে আছে। আরেকজনের তথ্যই এদের কাছে নেই। মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জেকশন ও নিষিদ্ধ স্যালাইন পুশ করাসহ নানা অব্যবস্থাপনার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। সেগুলো জব্দও করা হয়েছে। আপাতত এ হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হলো।

চিকিৎসকদের দায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আপাতত চিকিৎসকদের কোনো দায় আমরা দেখি নাই। হাসপাতালের অব্যস্থাপনার কারণেই এঘটনাগুলো ঘটছে বলে ধারণা করছি। 

চিকিৎসকদের দায়িত্ব নিয়ে সিভিল সার্জনের করা এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, চিকিৎসকদের বাঁচাতেই তদন্ত ছাড়াই এমন মন্তব্য করেছেন সিভিল সার্জন। চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ঢাকতেই তিনি এমনটি বলেছেন। তদন্ত করে দোষী সকলকেই শাস্তির আওতায় আনার দাবিও তাদের।

আপন দেশ/এন/এবি

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়