Apan Desh | আপন দেশ

নগরীর বস্তি পোড়ার গন্ধ অভিন্ন, তদন্ত রিপোর্ট যায় অতলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ১২ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৭:৩২, ১২ এপ্রিল ২০২৪

নগরীর বস্তি পোড়ার গন্ধ অভিন্ন, তদন্ত রিপোর্ট যায় অতলে

ছবি: আপন দেশ

রাজধানীর হাজারীবাগের ঝাউচরের আগুনে পুড়ে গেছে মসজিদ। এতিমখানা ও মাদ্রাসার প্রায় আড়াই শত শিক্ষার্থীর ট্রাঙ্ক সব পুড়ে ছাই। ঈদের ছুটিতে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় বইসহ মালামাল রেখে যায় তারা। বলছিলেন-হাজারীবাগের ঝাউচরের আগুনে পুড়ে যাওয়া মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার শিক্ষক ফরিদ আহমেদ।

ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও  কিছু্ক্ষাই হয়নি কিছুই। অতীতের লালবাগের নিমতলী, বনানীর টিঅ্যাণ্ডটি বস্তির অগ্নিকাণ্ডের ধরনও একই। 

দেশে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এতে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রচুর প্রাণহানিও ঘটছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হচ্ছে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, কোনো দুর্ঘটনার পর সাধারণত হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন প্রভৃতি আয়োজন করে কিছুদিন বেশ সরব ভূমিকা পালন করা হয়। পরে বিষয়টি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। 

গেলো কবছর আগের কথা। মহাখালির সাততলা বস্তিতে আগুন লাগার ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে আগুন লাগে মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লায়। সেখানকার আগুন নিভতে না নিভতেই ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে আগুন লাগে মিরপুরের বাউনিয়াবাদ এলাকার বস্তিতে। পুড়ে যায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এছাড়াও রাজধানীর কুমিল্লাপট্টির বস্তিসহ কতোধিক বস্তি পোড়ার গন্ধ প্রায় একই। বস্তিবাসীদের অনেকেই মনে করেন, পরিকল্পিতভাবেই লাগানো হয় আগুন।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে লাগা আগুনে পুড়েছে সব। মাত্র ৫০ মিনিটের আগুনে মাদ্রাসা, মসজিদসহ অন্তত ১৫টি দোকান পুড়েছে। যার বেশির ভাগই বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ৭ ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও রক্ষা হয়নি কিছুই।

টিন, বাঁশের দোকানে থরে থরে গুছিয়ে রাখা হয়েছে নানা ধরনের ভাঙ্গারি। উদ্দেশ্য ছিল ঈদের পরে বিক্রি করবেন। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিনেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নিজেরে চোখের সামনে ব্যবসার পুঁজি পুড়তে দেখে আহাজারি করছেন দোকান মালিক আলমগীর হাসান। শেষ সম্বল হারানো পরিবারের সদস্যরাও আহাজারি করছিল। 

ঘটনাস্থল ঝাউচর মোড়ে দেখা যায়, স্থানীয় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন জামিয়া ইসলামিয়া দারুস্ সুন্নাহ মাদ্রাসা। সঙ্গে এতিম খানা ও আলহাজ সামছুস হুদা জামে মসজিদ। আগুনের কারণে মাদ্রাসার সবকিছু পুড়ে ছাই হয়েছে। থরে থরে সাজানো মাদ্রাসা ছাত্রদের পুড়ে যাওয়া ট্রাঙ্ক, কাপড়, বিছানা ও কোরআন শরীফ সহ বিভিন্ন বই খাত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্থানীয়রা এ সব ট্রাঙ্ক সরাতে সহযোগিতা করছেন।

মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার শিক্ষক ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। মাদ্রাসায় ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিল। তারা ঈদের ছুটিতে শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। তবে তাদের ট্রাঙ্ক, কাপড় ও বিছানাপত্র মাদ্রাসায় ছিল। ছাত্রদের রেখে যাওয়া কোরআন শরীফ, হাদীস বইসহ অনেক বই ছিল। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা চাল ডালসহ সব কিছুই পুড়ে গেছে।

মসজিদের পাশে দোকানদের ভাষ্য, মাদ্রাসার ভেতর থেকে আগুন লেগেছে। এখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পলিথিনের গোডাউনের দায় দিচ্ছেন।

ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী হাসান মোল্লা বলেন, দোকানে ভাঙ্গারি, কার্টুন, পলিথিনসহ প্রায় ১০/১২ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব কিছু পুড়ে শেষ হয়েছে। আমি পথে বসে গেছি। বলতেই হাওমাও করে কেদে দেয় এ ব্যবসায়ি। পাশেই কাঁদছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা।

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে  জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-১ এর উপ সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, হাজারীবাগ ঝাউচরে ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ভাঙ্গারি দোকানে আগুন লাগে। হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনসহ আশেপাশের ৭টি ইউনিট মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। ফায়ার সার্ভিসের ততপরতার কারণে আশেপাশে আগুন ছড়াতে পারেনি। তবে কি কারণে আগুন লেগেছে ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এটা আগুন নেভানোর শেষে জানানো যাবে।

তিনি বলেন, এখানে প্লাটিকের ভাঙ্গারি দোকান ছিল। প্রচুর কাগজ ছিল। যার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর এখানে পানির স্বল্পতা ছিল, দূর থেকে পানি আনতে হয়েছে। তার পরেও আমাদের প্রচেষ্টায় আগুণ ছড়িয়ে যেতে পারিনি।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়