Apan Desh | আপন দেশ

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, দ্রুত বদলাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৬:৩০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, দ্রুত বদলাচ্ছে

খালেদা জিয়া: ফাইল ছবি

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কখনো ভালো, পরক্ষণেই খারাপ হচ্ছে। খারাপের সময়ই বেশি। মোটকথা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারিরীক অবস্থা অত্যন্ত জটিল হচ্ছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। এখনই বাসায় ফিরতে পারছেন না। এমনটি জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ডা. জাহিদ হোসেন আপন দেশকে বলেন,সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত জটিল’। সে কারণে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন তার লিভার, হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত—এ তথ্য তাঁর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর। তখন থেকে প্রায় দুই বছরে তাঁর পরিপাকতন্ত্রে কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিএনপির চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের একজন সিনিয়র সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তিনি  জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসের কারণে অনেক আগেই এই প্রত্যঙ্গ সংকুচিত হয়ে এর কার্যক্ষমতা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে তাঁর লিভারে জটিলতা বেড়ে গেছে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন<<>> খালেদা জিয়া এখন কেমন আছেন?

লিভার সিরোসিস এমন একটি রোগ, যার ফলে লিভার বা যকৃৎ তার স্বাভাবিক কাজগুলো যেমন বিপাক ক্রিয়া, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি করা, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা করতে পারে না। খালেদা জিয়া এসব সমস্যায় ভুগছেন বলে তাঁর মেডিকেল বোর্ডের ওই সদস্য জানিয়েছেন।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য উল্লেখ করেন, লিভার সিরোসিসের প্রভাবে মূল তিনটি প্রত্যঙ্গের একটি কখনো একটু ভালো থাকলে আরেকটিতে জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে। যেমন লিভারের জটিলতা বেড়ে গেলে তার চিকিৎসা দিয়ে একটা পর্যায়ে যখন আনা সম্ভব হচ্ছে, তখন কিডনি বা হৃদ্‌যন্ত্রের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। আবার সেই জটিলতা সামলাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এভাবেই খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এই চিকিৎসায় অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে চিকিৎসকদের খুব সতর্কতার সঙ্গে ওষুধ দিতে হচ্ছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে, তাই এখন বাসায় নেয়া সম্ভব নয়। তবে কবে নাগাদ বাসায় ফিরতে পারবেন সেটাও বলা যাচ্ছে না। 

এর বাইরে দেশে কিছু করার নাই
বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য দীর্ঘ দুই বছর ধরেই পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। এখন শেষ পরামর্শ হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করা প্রয়োজন। তাঁরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতায় দেশে যে চিকিৎসা আছে, তার সর্বোচ্চটা তাঁরা দিয়েছেন। এখন এর বাইরে তাঁদের কিছু করার নেই।

বিএনপি নেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সে আাবেদনে মেডিকেল বোর্ডের লিখিত পরামর্শও যুক্ত করা হয়। কিন্তু সরকারের দিক থেকে কোনো সদুত্তর পাননি। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আবারও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। তবে তাঁকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ আইনে নেই।

দীর্ঘ সময় ধরে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন।

গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্‌রোগে ভুগছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দী হন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতে থাকেন। প্রতি ছয় মাস পরপর সরকার তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়