Apan Desh | আপন দেশ

দৈনিক গ্রেফতার একহাজার, বন্দি বিএনপিতে ঠাঁসা কারাগার

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৭, ৫ নভেম্বর ২০২৩

দৈনিক গ্রেফতার একহাজার, বন্দি বিএনপিতে ঠাঁসা কারাগার

ফাইল ছবি

ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে সংঘাতের পর থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত আট দিনে সারা দেশে দলটির অন্তত ৭ হাজার ৮৭৫ নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা রয়েছেন অন্তত ১০জন। সাবেক সংসদ সদস্যসহ জেলা ও মহানগর পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। গ্রেফতারকৃত নেতাদের মধ্যে নারী নেত্রীও রয়েছেন।

এদিকে দৈনিক গড়ে হাজার নেতাকর্মী আটকের পর বিভিন্ন জেলায় কারাগারে ঠাসা হয়ে পড়ছে বন্দিতে। সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বন্দির সংখ্যা পাঁচগুণ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চি করেছে। তাতে খাদ্য সঙ্কট না হলেও রাতে ঘুমানোর জায়গা হচেছ না। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে পুলিশের ব্যাপক অভিযান শুরুর পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতার বেশির ভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন।

<<< বিএনপি-জামায়াত খুঁজে বের করে ধরিয়ে দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সর্বশেষ আজ রোববার (৫ নভেম্বর) গাজীপুরের টঙ্গি এলাকা থেকে বিএনপি ভা্ইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে আটক করেছে র‌্যাব। শনিবার সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফেনীর পরশুরামের সাবেক পৌর মেয়র আবু তালেবকে আটক করা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

শুক্রবার রাত থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তিন জেলায় মোট ১৫২ নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে ঢাকার আদালত ও আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ৮০ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ৪১ জন, ফেনীতে ১ জন ও জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গত আট দিনে ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৩১৯ নেতা-কর্মী। সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায়। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘর্ষ, পুলিশ হত্যা, পুলিশের অস্ত্র লুট, হরতাল ও অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় বেশির ভাগ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয় বলে বিএনপি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন ২৯ অক্টোবর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। পরে ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ (প্রিন্স), মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও সর্বশেষ আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তাদের মধ্যে মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন, জহির উদ্দিন স্বপন ও আমিনুল ইসলাম রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আদালত তাদের পাঁচ থেকে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

<<<<< মির্জা ফখরুলসহ রাজবন্দিদের মুক্তির চায় ৫৮৭ বিশিষ্ট নাগরিক-বুদ্ধিজীবী

এর আগে গত বুধবার রিমান্ড শুনানিতে মির্জা আব্বাস আদালতে বলেছেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের মতো নেতাদের শেষ করে দেয়া হবে।

তথ্যমতে, গত আট দিনে (২৮ অক্টোবর-৫ নভেম্বর) ঢাকা মহানগরের বাইরে দেশের অন্যান্য জেলায় বিএনপির ৫ হাজার ৬১৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোরে ৪৫৩, চট্টগ্রামে ৩২০, নারায়ণগঞ্জে ২৬৭, সিরাজগঞ্জে ২৩৮, ঝিনাইদহে ২২০ ও নওগাঁয় ২০৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। নোয়াখালীতে গ্রেফতার হয়েছেন ১৭৫ জন। প্রায় দেড়’শ করে গ্রেফতার আছেন দিনাজপুর, খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, পাবনা, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদীতে। পিরোজপুর, পটুয়াখালী, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় গ্রেফতার হয়েছেন জেলাপ্রতি ১০০ জন বা তার বেশি। ৭০ জনের বেশি গ্রেফতার আছেন নাটোর, জয়পুরহাট, শেরপুর ও জামালপুরে। বাকি জেলাগুলোতে ২ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত গ্রেফতা হয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৬৫ জন গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে।

জেলা পর্যায়ে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মধ্যে কুষ্টিয়ায় বিএনপির সাবেক তিন সংসদ সদস্য এবং দলটির জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহসভাপতি যথাক্রমে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ (রুমী), সোহরাব উদ্দীন ও রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা রয়েছেন।

বরিশালে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খান।

আরও পড়ুন<<>> ওরা চোর-ডাকাতের চেয়েও জঘন্য: ড. হাছান মাহমুদ

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান ও সদস্যসচিব মাহফুজ উন-নবী, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী, দিনাজপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান, নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম ও পাবনায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকারসহ বিভিন্ন স্থানে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা মামলার আসামি তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে পুলিশের টানা অভিযানের মুখে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। আত্মগোপনে থেকেই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা ও দলের অবস্থান জানিয়ে আসছেন দলটির সিনিয়র  যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, জাতীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল- ইউনিয়ন পর্যন্ত গ্রেফতারের যে হিড়িক চলছে; সেটি ভাষায় বলা যাবে না।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ