Apan Desh | আপন দেশ

তারেক রহমানের কালো তালিকায় দলের অনেক নেতা

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ৯ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১৯:২৩, ৯ আগস্ট ২০২৩

তারেক রহমানের কালো তালিকায় দলের অনেক নেতা

প্রতীকী ছবি

সরকার পতনের চলমান একদফা আন্দোলনে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ নেতাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে বিএনপির হাইকমাণ্ড। দলীয় সূত্র বলছে- এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। তাতে আছেন-স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন স্তরের নেতার নাম। 

আগামীর কর্মসূচি সফল করতে দলের ব্যর্থ নেতাদের কাছ থেকে পদ ফেরত নিচ্ছেন শীর্ষ নেতা। এই কঠোর অবস্থান জানান দিতে ইতোমধ্যে ( ৮ আগষ্ট) ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে এক চিঠিতে বিদায় করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারনী পর্যায়েক এক নেতা আপন দেশকে জানান, অতীতে ‘‘চল চল ঢাকা চল’ আন্দোলন ব্যর্থ হবার কারণ খুঁজে বের করা হয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই এবারের আন্দোলন ও নেতৃত্ব ঠিক করা হয়েছে। মামলায় কারাবন্দি, দলের সঙ্গে বেঈমানী করাসহ নানা কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারেন। তাই নেতার বিকল্প নেতাও নির্বাচন করে রাখা হয়েছে। তিন থেকে চারস্তরের নেতা রিজার্ভ রাখা হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান ওই নীতি নির্ধারক। 

তিনি আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলমান আন্দোলন ও দলীয় নেতাদের গতিবিধি জানতে নানাবিধ কৌশল গ্রহণ করেছেন। বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনেককেই ইতোমধ্যে সাবধান বার্তা দিয়েছেন। ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে একাধিক সভায় নেতাদের উদ্দেশ্য বেশ কঠোর বার্তা দিয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, শারীরিকভাবে আমি হাজার কিলো দুরে আছি; কিন্তু আন্দোলনের প্রতিটি স্তরেই আমার মানসিক উপস্থিতি রয়েছে। আমি আপনাদের দায়িত্ব নিচ্ছি, আপনারা সাধারণ মানুষের দায়িত্ব নিন। মনে রাখবেন দায়িত্ব পালনে আপনার ব্যর্থতায় দলীয় নেতাকর্মী তথা দেশের মানুষের ভাগ্যে আরও দুর্ভোগ নেমে আসবে। তাই যিনি পারবেন না তিনি দায়িত্ব নেবেন না, আর দায়িত্ব নিয়ে পালনে ব্যর্থ হলে তারও দায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন<> ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ

তারেক রহমানের কঠোর হুশিয়ারির বাস্তবতা মিলেছে গতকাল মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট)। 

গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় পদ হারাতে হলো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে। তাকে সরিয়ে রাশেদ ইকবাল খানকে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের অসুস্থতার কারণে তার পরিবর্তে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন রাশেদ ইকবাল। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা আপন দেশকে বলেন, শ্রাবণ অসুস্থ নন। তাকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মানেই তিনি আর ছাত্রদল সভাপতি নেই। কিন্তু কৌশলগত কারণে সরাসরি তাকে বাদ দেয়া হয়নি। শ্রাবণকে যখন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় তখন তিনি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। তিনি নিজেও জানতেন না তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ছাত্রদলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, সভাপতিকে সরিয়ে দেয়া হবে-এমন খবর তাদের কাছে ছিল না। তবে ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে শ্রাবণের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট না হওয়ায় বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা হচ্ছিল। বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জানতেন।

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আরো কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতাসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে এই তালিকায় আছেন। শ্রাবণের অব্যাহতির পর অনেকেই পদ হারানোর আতঙ্কে আছেন বলে জানা গেছে।

২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে দরাজগলায় স্লোগান দিয়ে পুলিশের অ্যাকশন দেখে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর পলায়নের ভিডিও এখন ভাইরাল। এছাড়াও ধাপে ধাপের কর্মসূচিতে রাজধানী ও মহানগর-জেলার নেতাদের ভূমিকা দেখে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। কর্মী লালনে নেতার গাফিলতি, গ্রেফতারকৃত কর্মীর পরিবারের প্রতি স্থানীয় নেতা বা সাবেক এমপিদের দায়িত্ব পালনসহ বেশ কিছু বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দলের হাইকমাণ্ড। এর আলোকেই বিকল্প নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দা দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, চলমান মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বা দণ্ডিত হতে পারেন-এমন নেতাদের তালিকা করেছে বিএনপি। এরমধ্যে রযেছেন- বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান। শাসক দলীয় নেতার সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করবার মতো নেতাদের তালিকা দীর্ঘ। তাদের গতিবিধির প্রতি দৃষ্টি রাখতে দেশের শীর্ষ নেতা ও দলের মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়