Apan Desh | আপন দেশ

ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা, হুমকিতে পরিবেশ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪

ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা, হুমকিতে পরিবেশ

ছবি: আপন দেশ

অবৈধভাবে ব্যাটারি ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ্যে হুমকির মুখে পড়েছে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌলী এলাকা। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। বিষাক্ত বর্জ্যের ধোঁয়া ছড়াচ্ছে পমিজান মেটাল নামের একটি ব্যাটারি ফ্যাক্টরি। নির্গত এসিড মিশ্রিত তরল বর্জ্য, সিসা যুক্ত ছাই ও ধোঁয়া দুর্বিষহ করে তুলেছে স্থানীয়দের জীবন। এমনকি জীববৈচিত্রের ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

এলাকাবাসী জানান, বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে কারখানার আশপাশের জমিতে ফসল হয়না। গাছে ফল ধরে না, পুকুরে মাছও বাঁচে না। ছাই-ধোঁয়ার কারণে এলাকার প্রায় মানুষেরই চোখের অসুখ, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ লেগেই থাকে। নারী, শিশু ও জমিতে কাজ করা শ্রমিকরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। কারখানার ধোঁয়া বের হলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। 

দূষণ থেকে রেহাই পেতে স্থানীয়রা যোগাযোগ করলেও কর্ণপাত করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।

পৌলী গ্রামের ওয়াজেদ জানান, কারখানার সাথে আমার ৪৬ শতাংশ জমি আছে। সেখানে ধান রোপণ করতাম। কারখানা হওয়ার পর কোন আবাদ হচ্ছে না। কারখানার দূষিত ধোঁয়ায় সব পুড়ে যাচ্ছে। জমিতে কাজ করার সময় শরীরে ধোঁয়া লাগে; বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। শরীরে চামড়াতেও পুড়ে যাওয়ার মতো কালো দাগ হচ্ছে। আশপাশের বাড়ি ঘরের টিন ফুটো হয়ে যাচ্ছে। আম, জাম, পেঁপে, নারিকেল এবং সবজি গাছে কোন ফুল-ফল থাকছে না। ঝরে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন>> নির্বাচনী দৌঁড়ে বড় জয় ট্রাম্পের

মহেলা গ্রামের ছালাম জানান, কারখানাটি চালু থাকলে ধোঁয়ার কারণে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নাকের ভেতরে জ্বালাপোড়া করে। এজন্য মানুষের অনেক অসুখ দেখা যাচ্ছে। মশাজান গ্রামের নাছির উদ্দীনও একই কথা জানান।

দক্ষিণ পৌলি গ্রামের রুবেল মিয়া জানান, কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয় কারখানাটিতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার জন্য ব্যাটারি তৈরি করা হবে। কিন্তু তারা ব্যাটারি তৈরি না করে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করছে। এ কারণে শুরুতেই কারখানার তরল ও উড়ন্ত বর্জ্যে দূষিত হতে থাকে পরিবেশ। ফলে এলাকায় কৃষি জমিতে শস্য উৎপাদন হচ্ছে না। 

‘চারাগাছ রোপনের শুরুতেই দূষিত ধোঁয়ায় মরে যাচ্ছে। বাসা বাড়ি টিন নষ্ট হচ্ছে। আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কমলমতি শিশুরা। কারখানার পাশেই একটি মাদ্রাসা রয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষর সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে চার গ্রামের ৩০০ মানুষ গণস্বাক্ষরও করেন। আমি এলাকাবাসীর পক্ষে কারখানাটি বন্ধে প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে ব্যাটারি ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা চাঁন মিয়া জানান, আমরা সিসা গালিয়ে ব্যাটারি তৈরি করে থাকি। আর অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানা নেই। এলাকাবাসী যা বলছে সব মিথ্যা। এছাড়াও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ সব ধরণের কাগজপত্র রয়েছে।

এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, এখান থেকে কিছু লোক সুবিধা নিচ্ছে। আবার কিছু লোক অভিযোগ করছে। কারখানার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদেরকে বারবার অবগত করেছি, জনসাধারণের কোন ক্ষতি যেন না হয়। 

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেব। 

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, এর আগেও টেকনিক্যালিক সমস্যার কারণে কারখানাটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা  করেছি। তারপরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে এর সঠিক ব্যবস্থা নেব।

অভিযোগটি দেখে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান
 
আপন দেশ/বিসি/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়