Apan Desh | আপন দেশ

ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক, অন্ধকারে ২ শতাধিক পরিবার

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১৯ মার্চ ২০২৪

ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক, অন্ধকারে ২ শতাধিক পরিবার

ছবি: আপন দেশ

ঝালকাঠির রাজাপুরে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক পড়েছে। চলতি মাসে ছয়টি চুরি হয়েছে। এ নিয়ে গত আড়াই মাসে ১১ ট্রান্সফার্মার চুরি হয়েছে। চারটি স্থানে ট্রান্সফর্মার না থাকায় দুই শতাধিক পরিবার অন্ধকারে রয়েছেন। চুরি হওয়া স্থানে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে গ্রাহকদের টাকায় নতুন ট্রান্সফর্মার কিনতে হচ্ছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ থাকাকালীন ও লোডশেডিংয়ের সময় ট্রান্সফর্মার চুরি হচ্ছে, যা কোন সাধারন মানুষের পক্ষে চুরি করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে।

উপজেলার মধ্য চাড়াখালী গ্রামের আল আমিন জানান, কয়েকদিন আগে মধ্য চাড়াখালী ১৫ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে অন্তত ৩৫ পরিবার বিপাকে পড়েছে।

নিমহাওলা এলাকার জাহিদ ও হিরন খান জানান, গালুয়া ইউনিয়নের খায়রে হাট নিমহাওলা এলাকার ১০ কেবি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে ওই এলাকার ১৫ পরিবারেরও বেশি পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। 

ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের ইসা আকন পলাশ জানান, ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের ৫ কেবি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে ১৫ পরিবার দুর্ভোগে রয়েছে। বদনিকাঠি গ্রামের মুন্না জানান, বদনিকাঠি খান বাড়ির ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় অনেক পরিবার বিদ্যুতবিহীন রয়েছে। 

সত্যনগর তুলাতলা এলাকার আখি ও লিজা জানান, সত্যনগর তুলাতলা এলাকার সাড়ে ৩৭ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে অন্তত ৭৫ পরিবার কয়েকদিন ধরে অন্ধকারে রয়েছে। চরম ভোগান্তিতে থাকলেও নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হচ্ছে না। এখনও গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনতে হবে বলে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জানিয়েছে। 

বাগড়ি বাশতলা গ্রামের রিংকু সিকদার, নাদিম, আলিম ও আলম জানান, বাগরি বাশতলা গ্রামের ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে যায় পরে ৪৫ জন গ্রাহকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনে স্থাপন করতে হয়েছে। এতে প্রায় এক সপ্তাহ অন্ধাকারে থাকতে হয়েছে সবাইকে। লাইন চালু থাকাকালীন সাধারণ মানুষের পক্ষে ট্রান্সফর্মার চুরি করা সম্ভব নয়, এর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।

আরও পড়ুন>>ঝালকাঠিতে অবৈধ ৩৩ ইটভাটা বন্ধ

গ্রাহকদের আরও অভিযোগ, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়, ওই সময় ট্রান্সফর্মার চুরি করে দুর্বৃত্তরা। পল্লী ঠিকাদারের কর্মচারী, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে একের পর এক ট্রান্সফর্মার চুরি হচ্ছে। আর ট্রান্সফর্মার চুরি হলে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে হয়। নতুন ট্রান্সফর্মার বিক্রির কূটকৌশল হলো ট্রান্সফর্মার চুরি।

এছাড়াও উপজেলার বড়ইয়া পালট, চুনপরি ও সাতুরিয়া ইউনিয়নে ট্রান্সফর্মার চুরির খবর পাওয়া গেছে। অধিকাংশ স্থানের ট্রান্সফর্মারের ভেতরের তামার কয়েল নেয় চোরেরা। 

কিছুদিন পর পর একের পর এক ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটেই চলছে। কিন্তু প্রতিরোধে বা চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কোন মাথাব্যথা নেই। চোরের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অসহায়। তাতে অনেক দিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফ্রিজে রাখা শাক-সবজি, মাছ, মাংস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

গ্রাহকরা আরও জানান, ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেও কোন লাভ হচ্ছে না।

রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দু’টি, ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি ও চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত ছয়টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। সাড়ে ৩৭ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার, ২৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় এক লাখ টাকা, ১৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৭৯ হাজার টাকা, ১০ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ও ৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন>> রাজনীতিতে নতুন ‘রহস্যপুরুষ’ রিজভী আহমেদ

পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িতের অভিযোগ নাকচ করে রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম (ওএন্ডএম) মধুসূদন রায় জানান, বর্তমানে চার জায়গায় ট্রান্সফর্মার চুরি হওয়ার পর নতুন করে স্থাপন করা হয়নি। এতে অন্তত দেড় থেকে ২০০ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছে। চুরি হওয়া স্থানে প্রথম বার গ্রাহকদের অর্ধেক ও দ্বিতীয় বার সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহকদের দিতে হয়, এটা কষ্টের বিষয়। চুরি ঠেকাতে গ্রাহকদের সচেতনতার পাশাপাশি পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও চুরি ঠেকাতে মাইকিং করা হবে। এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও জরুরি। পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাওয়া হবে। 

রাজাপুর থানার ওসি মু. আতাউর রহমান জানান, পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে ট্রান্সফর্মার চুরির বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চোরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আপন দেশ/এআই/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়