Apan Desh | আপন দেশ

ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার এনবিএলের পথে!

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান

প্রকাশিত: ২২:২২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১২:১০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার এনবিএলের পথে!

ফাইল ছবি

শেয়ার বাজারে ব্যাংকখাতে দুর্বল ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)। দুর্বল এ ব্যাংকের পথে হাটছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি। শেয়ার বাজারে ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে দুর্বলতার দিক থেকে সমাপনী দর অনুযায়ী ইউনিয়ন ব্যাংকের অবস্থান তৃতীয়। প্রথম হলো আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। যার বাজার মূল্য ৪টাকা ৩০ পয়সা। আর দ্বিতীয় ব্যাংক এনবিএলের দাম ৭টাকা ৩০ পয়সা। এরপরই ইউনিয়ন ব্যাংক। যার বাজার মূল্য ৮টাকা ৩০ পয়সা। সূত্র: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (১৮ ফেব্রুয়ারি)। 

২০২২ সালে শেয়ার বাজারে এসেই ব্যাংকটি ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে চরম হতাশ করেছে শেয়ারহোল্ডারদের। গত দুই বছরেও ব্যাংকটি আইপিওর ফান্ড শতভাগ ব্যবহার করতে পারেনি। কমেছে তৃতীয় প্রান্তিক আয়ও। সব মিলিয়ে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে বিনিয়োগকারীদের।

কোম্পানিটির সচিব আলি হোসেন ভুইয়ার ব্যখ্যা হলো- ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক সূচক দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) ডিভিডেন্ড সুপারিশ করে। সেক্ষেত্রে ইউনয়ন ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় ২০২২ সালে ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কমিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিবি। মূলত পরিশোধিত মূলধন বেশি হওয়ার কারণে শেয়ার দরের এমন করুন দশা- জানান তিনি।   

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, কোম্পানিগুলো যেখানে বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দেয়ার জন্য উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করার চেষ্টা করে। সেখানে ইউনিয়ন ব্যাংক যেন ঠিক উল্টোপথে হাটছে।

                                      আরও পড়ুন<<>> মিডল্যাণ্ড ব্যাংক-বিমুখ হচ্ছেন বিনিয়োগকারী, শেয়ারদরও কমছে

২০২১ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়। যেখানে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ৫ শতাংশ এবং স্টক ডিভিডেন্ড ৫ শতাংশ ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বছরে ব্যাংকটির ডিভিডেন্ড অর্ধেকে নেমে আসে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সে বছর মাত্র ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয় বিনিয়োগকারীদের। যার ফলে ব্যাংকটির ক্যাটাগরির অবনমন হয়। অর্থাৎ ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরিতেই অবস্থান করছে ব্যাংকটি; যা ব্যাংকটির প্রোফাইল অনুসরণ করলেই দেখা যায়।

ব্যাংকগুলো সাধারণত ইচ্ছা করলেই বেশি বা কম ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয়ার সুপারিশ করবে, সেই পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিতে হয় ব্যাংকগুলোকে। কোন ব্যাংক আর্থিকভাবে দৈন্যদশায় থাকলে সেই ব্যাংককে কম ডিভিডেন্ড দেয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এক্ষেত্রে ইউনিয়ন ব্যাংক আর্থিকভাবে দৈন্যদশায় থাকায় ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কথা আলি হোসেন ভুইয়া আপন দেশের কাছে স্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন<<>> শেয়ার বাজারে আসার আগেই এনআরবি ব্যাংকে অস্থিরতা

তিনি জানান, ব্যাংকের বিভিন্ন সূচক দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিভিডেন্ড সুপারিশ করে। সেক্ষেত্রে ইউনয়ন ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় ২০২২ সালে ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কমিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যা পরবর্তীতে আমাদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে বিনিয়োগকারীদের প্রদান করা হয়েছে।

ব্যাংকটির শেয়ার দরের এ করুণ পরিনতিতে হতাশা প্রকাশ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা জানান, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর দুই বছর যেতে না যেতেই ব্যাংকটির এমন করুন পরিণতি মেনে নেয়ার মতো নয়। এধরনের দুর্বল ব্যাংককে কোনভাবেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা উচিত হয়নি। এধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। এর দায় কে নেবে?

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন ব্যাংক এখনও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য ব্যাংকটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কাছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে। ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর,২০২৩) ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ০ দশমিক ৫২ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ০ দশমিক ৫৬ টাকা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আয় কমেছে ০ দশমিক ০৪ টাকা।

আরও পড়ুন<<>> শেয়ার কেলেঙ্কারীতে দন্ডপ্রাপ্ত সেই এনআরবি ব্যাংক আসছে বাজারে!

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী আপন দেশকে জানান, ইউনিয়ন ব্যাংককে কোনভাবেই শেয়ারবাজারে আসার অনুমতি দেয়া উচিত হয়নি। শেয়ারবাজারে আসার আগে থেকেই ব্যাংকটি আর্থিকভাবে দুর্বল। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একিভূত করা।

আলি হোসেন ভুইয়া আপন দেশকে বলেন, আমরা আইপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার এখনও সম্পূর্ণ করতে পারিনি। আর আগামীতে ডিভিডেন্ড কি পরিমাণ দেয়া হবে তা এখন বলতে পারবো না। মাত্র ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এপ্রিলে শেষ হতে পারে। তারপরে ডিভিডেন্ডের বিষয়টি ঘোষণা করবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

আপন দেশ/টি/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়