Apan Desh | আপন দেশ

শেয়ার বাজারে আসার আগেই এনআরবি ব্যাংকে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ২১:১৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শেয়ার বাজারে আসার আগেই এনআরবি ব্যাংকে অস্থিরতা

ছবি: আপন দেশ

শেয়ার বাজারে আসার আগেই এনআরবি ব্যাংকে অস্থিরতা। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরে যাচ্ছেন শীর্ষ কর্তারা। প্রবাসী ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত ব্যাংকটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্তির শেষের দিকে। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মামুন মাহমুদ শাহ। তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি। সবমিলিয়ে ব্যাংকটি নিয়ে  বিনিয়োগকারীরা ভুগছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে আস্থা ফেরাতে নানামুখি কৌশল গ্রহণ করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। চেয়ারম্যানের দাবি, এমডি পায়ে ব্যথা পেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। এজন্য মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে ব্যাংক ছেড়ে দিয়েছেন। আর পদত্যাগী এমডি বলছেন, ব্যাংকটিতে কাজের পরিবেশ নেই। তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছি। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। 

ব্যাংকটির অস্থিরতা নিয়ে প্রতিবেদক প্রকাশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো। এনআরবি ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকজন পরিচালকের চাপে ব্যাংকটিতে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু ঋণ অনুমোদন হয়, যা নিয়মিতভাবে আদায় হচ্ছে না। সম্প্রতি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়, যার বেশির ভাগই বেনামি ঋণ। এ বেনামি ঋণের জের ধরেই এমডি পদ ছেড়ে দেন।

আরও পড়ুন>> এনআরবিদের চোখ কেন আর্থিক খাতে ?

ব্যাংকটির এমডি মামুন মাহমুদ শাহ তা স্বীকার না করলেও বলেন, ‘ব্যাংকটিতে কাজের পরিবেশ না থাকায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছি’। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত যে তিনটি ব্যাংককে দেশে ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে অনুমোদন দেয়, তার মধ্যে একটি এনআরবি ব্যাংক। তিন ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি ব্যাংকটিই প্রকৃত প্রবাসী ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত হয়। অন্য দুটির সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও যুক্ত ছিলেন।

এনআরবি ব্যাংক প্রবাসী ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত হলেও এখন পরিচালকদের অনেকে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আবার ব্যাংকটির মূল উদ্যোক্তাদের অনেকে ব্যাংক থেকে দূরে সরে গেছেন। ফলে একটি পক্ষের হাতে পুরো ব্যাংকটি জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে গত তিন বছরে ব্যাংকটির বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি হয়। এর মধ্যে এমডি পদত্যাগ করলেন।

এনআরবি ব্যাংকের নথিপত্র অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অ্যালায়েন্স হাসপাতালের নামে ৫৫ কোটি টাকা চলতি মূলধন ঋণের অনুমোদন হয়। হাসপাতালটি ভাড়া ভবন থেকে পরিচালিত হয়, ঋণের বিপরীতে তেমন কোনো জামানতও নেই। ঋণটির আদায় ইতোমধ্যে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।

একইভাবে গত বছরের আগস্টে নতুন নিবন্ধিত হওয়া বরুণ করপোরেশনের ১৯ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন হয়। এই ঋণও নিয়মিতভাবে ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংকটি। গত আগস্টে বেলা অ্যাগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় চার কোটি টাকা। এই ঋণ ইতোমধ্যে অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। এমন আরও কয়েকটি ঋণ প্রস্তাব সম্প্রতি ব্যাংকটিতে আসে, যা অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়া হয়। এর জের ধরে এমডি পদত্যাগ করেন বলে ব্যাংকটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এনআরবি ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন মামুন মাহমুদ শাহ। তার মেয়াদ শেষ ছিল ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে গত ২১ জানুয়ারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া পদত্যাগপত্রে এমডি উল্লেখ করেন, ব্যক্তিগত কারণে তিনি এনআরবি ব্যাংকে মেয়াদ থাকা পর্যন্ত চাকরি করতে পারছেন না।

আরও পড়ুন>> শেয়ার কেলেঙ্কারীতে দন্ডপ্রাপ্ত সেই এনআরবি ব্যাংক আসছে বাজারে! 

ব্যাংকটির অন্য একটি সূত্র জানায়, ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদকে ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে কৌশলে সরিয়ে দেওয়ার পর নামে–বেনামে ঋণ তৈরি হওয়া শুরু হয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ব্যাংকটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন পরিচালক। এর মধ্যে কেউ কেউ ব্যাংকটিতে পূর্ণ সময় অফিস করছেন। বর্তমান পরিচালকদের বেশির ভাগই একটি গ্রুপসংশ্লিষ্ট।

যোগাযোগ করা হলে এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান বলেন, ‘এমডি সাহেব পায়ে ব্যথা পেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। এজন্য মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে ব্যাংক ছেড়ে দিয়েছেন। উনি ভালো মানুষ। ব্যাংকের অনেক উন্নতি করেছেন। প্রয়োজনে আমরা আবারও তাকে এমডি করতে পারি।’

চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র এনআরবি ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়নি। ২০২১ সালে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকের কোনো কোনোটির আমানত ও ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়িয়ে গেলেও এনআরবি ব্যাংক সেই পথে যায়নি। ২০২১ সালে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, যা গত বছর শেষে বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৪ হাজার ২৪ কোটি টাকা, যা গত বছর শেষে হয়েছে ৬ হাজার ৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা বা ৫ শতাংশ।

২০১৯ সালে ব্যাংকটি নিট লোকসান করলেও ২০২১ সালে মুনাফা করে ৬৩ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালে কিছুটা কমে হয় ৫৫ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটি ১৪৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়