ফাইল ছবি
ঈদুল আজহার ছুটি শেষ। প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আজ রোববার (৯ জুলাই) খুলেছে সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ডেঙ্গুভীতির মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে ছাত্রছাত্রীরা।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন মশার বংশ বিস্তার না হয় সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ ছুটিতে পরিচ্ছন্নতার অভাবে খেলার মাঠ, আশপাশ এলাকা এমনকি খোদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে এডিস মশার বংশ বিস্তারের সমুহ শঙ্কা আছে। আর শঙ্কা সত্য হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টি সামনে রেখে ইতোমধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ছুটির শুরুতে একদফা নির্দেশনা দেয়া হয়। ছুটির সময়টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা ছিল।
মাউশির নির্দেশনাসমূহ-
ডেঙ্গু বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বহু মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগ হতে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। ডেঙ্গু এডিস মশা বাহিত একটি রোগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলার মাঠ এবং ভবনগুলোর মধ্যে পানি জমে থাকে এমন জায়গা, ফুলের টবে জমে থাকা পানি এডিস মশার উপযুক্ত প্রজনন কেন্দ্র।
ডেঙ্গু বিস্তার রোধে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি পরবর্তী খোলার পর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
১. খেলার মাঠ ও ভবনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
২. মাঠ কিংবা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যেসব ফুলের টব রাখা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
৪. এডিস মশার প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/শিক্ষকরা কর্তৃক ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো প্রত্যেক শিক্ষার্থীরদের অবহিত করতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা-
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্পর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়, সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং দফতর-সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য গত ২২ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় আন্তঃমন্ত্ৰণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ স্বদ্যোগে তাদের অধীনস্থ দফতর-সংস্থার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে মশাবাহিত রোগ বিশেষ করে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে এডিস মশার লার্ভা জন্মদান করতে না পারে সেজন্য ঈদুল আজহার ছুটির পূর্বে ও ছুটি পরবর্তী অফিস-বিদ্যালয় খোলার পূর্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন <> রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে, হুমকি ডেঙ্গু
রাজধানীর কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে সচেতনতামূলক কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া স্কুলে প্রতিটি ক্লাস রুম, খেলার মাঠ, খোলা জায়গাসহ যেখানে পানি জমে ছিল সব পরিষ্কার করে স্প্রে করা হয়েছে। বর্ষা চলাকালে প্রতিদিন স্কুলের আঙিনা পরিষ্কার রাখাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা শার্ট, জামা পরিধান এবং মোজাসহ জুতা পরে আসার জন্য বলা হয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক ছাত্রী মারা গেছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে তারা সচেতন আছেন।
রাজধানীর উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে মাউশির স্থায়ী নির্দেশনা আছে। এরপরও এবারো সংস্থাটি থেকে পাঁচ দফা নির্দেশনা আসে। সেটির আলোকে স্কুলের মাঠ, ভবন, ফুলের টব, এসি এবং যেখানে পানি জমে থাকতে পারে, তা পরিষ্কার করা হয়েছে।
ভিকারুননিসা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে সব ক্লাস রুম, ফাঁকা জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। মাঠে জমে থাকা পানি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করে স্প্রে করা হয়েছে। প্রতিদিন স্কুল বন্ধ ও খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক উত্তম কুমার বলেন, স্কুল খোলার পর কী কী করতে হবে তার নির্দেশনা ঈদের আগেই দেয়া হয়েছে। স্কুল এসব নির্দেশনা মানছে কিনা তা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকি করতে বলা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে নির্দেশনা না মানার অভিযোগ বা প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, খোলার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করার ব্যাপারে নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সবাই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস উপযোগী করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রস্তুত করেছেন বলেই প্রত্যাশা রাখি। আর দ্বিতীয়ত, একটি প্রতিষ্ঠানপ্রধান সরকারের প্রতিনিধি এবং সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব করবেন বলেই প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা এবং অভিভাবকদের দায়িত্ব আছে। তারা যদি দুর্যোগকালীন সচেতন আর সহায়কের ভূমিকায় থাকেন, তাহলে পরিস্থিতি সুচারুরূপে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।