Apan Desh | আপন দেশ

শীতে কাপছে উত্তর জনপদ,বাড়ছে রোগবালাই

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৩:৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩

শীতে কাপছে উত্তর জনপদ,বাড়ছে রোগবালাই

ছবি : সংগৃহীত

রোদের ক্ষণিক দেখা মিলে দিনের শুরুতে। এরপর থেকেই ঘণকুয়াশা। হাড়-কাঁপানো শীত। চরম দুর্ভোগে উত্তরজনপদের মানুষ। সপ্তাহ ধরে টানা সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর জন্য শীত যেন অভিশাপ। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, নীলফামারীসহ এই এলাকার পাথর শ্রকিদের দিন কাটে বরফের সঙ্গে। 

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এর আগে ভোর ৬টায় ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ তথ্য জানান সীমাণ্ডবর্তী তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ। 

আবহাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের ১০ থেকে ৯ ডিগ্রির তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৬ দিন। অপর একদিন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সপ্তাহ ধরেই এ জেলায় প্রবাহিত হচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

গত এক সপ্তাহ তাপমাত্রা দেখা যায়- ২১ ডিসেম্বর ৯.৬, ২০ ডিসেম্বর ১০.১, ১৯ ডিসেম্বর ৯.৫, ১৮ ডিসেম্বর ৯.৭, ১৭ ডিসেম্বর ১০ ও ১৬ ডিসেম্বর ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালে কিছুক্ষণের জন্য দেখা মেলে সূর্যের রোদের ঝলকানি। সূর্যের কিরণে আলো ছড়ালেও রাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তাপমাত্রার পারদ নোমে তলানীতে। শুরু হয় হাড়-কাঁপানো শীত। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে হিম সকালেই কাজে যেতে দেখা যায় এ অঞ্চলে পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, ভ্যান চালক, দিনমজুর থেকে নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষদের। পাথর শ্রমিকরা নদীতে বরফ জলের মধ্যেই নেমে পড়েন কাজে। এ আয়ের মধ্য দিয়ে চলে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ।

স্থানীয়রা জানান, বিকেল থেকে হিমেল বাতাসে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের মাত্রাটা বেশি বাড়ে এখানে। রাত গভীর হবার সঙ্গে বাড়ের শীতের তীব্রতাও। ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে আসবাবপত্র ও বিছানা পর্যন্ত বরফ হয়ে উঠে। সকালে গৃহস্থালি কাজ করতে গিয়ে কনকনে ঠাণ্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এ সময়টাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে। তবে সকাল ১০টা থেকেই তাপমাত্রা বেড়ে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকছে। তবে বেলা অবধি এ অঞ্চলের মানুষদের শরীরে শীতের গরম পোশাক পড়ে থাকছেন।

ডাহুক ও মহানন্দা নদীতে পাথর তোলা সাঈদুল, ইলয়াস, নজির হোসেনসহ পাথর শ্রমিক। তারা জানায়, নদীর পানি প্রায় বরফ। কিন্তু কী করবো, পাথর তোলা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। এ পাথর তুলেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তাই পেটের তাগিদেই বরফ জলে নেমে পাথর তুলতে হচ্ছে।

চা শ্রমিকদের ভাষ্য, এখন আগের মতো কুয়াশা নেই। কিন্তু কনকনে শীত। ভোরে প্রচণ্ড হিমশীতের মধ্যেই তারা চা বাগানে পাতা তুলতে এসে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কী করবো, জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে। 

এদিকে শীতের কারণে বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন শীতজনিত রোগ ব্যাধি। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগী বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসকরা চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন। 

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, এক সপ্তাহ ধরেই তাপমাত্রা ১০ থেকে ৯ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড হওয়ায় এ অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে এই এলাকাটি হিমালয় বিধৌত অঞ্চলে অবস্থান থাকায় দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে এখানে শীতের মাত্রাটা বেশি থাকে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়