Apan Desh | আপন দেশ

বেইলি রোডে আগুন: ৪৪ মরদেহ হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২ মার্চ ২০২৪

বেইলি রোডে আগুন: ৪৪ মরদেহ হস্তান্তর

ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহত ৪৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দুজনের মরদেহ এখনো পড়ে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। ডিএনএ টেস্ট করে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

শনিবার (২ মার্চ) বেলা ১১টায় গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া।

তিনি বলেন, দুজনের মরদেহ এখনো মর্গে আছে। ডিএনএ টেস্টের মধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে ৪০ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে থাকা সাংবাদিক অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টির লাশ আঙুলের ছাপের মাধ্যমে নিশ্চত হয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ছাড়া শনিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন (৩৫), তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা হেলালী (২৪) এবং তাদের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলার (৪) মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো সাততলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে। ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

এরমধ্যে আগুনে হতাহতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দ্বিতীয় তলার কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে। এ রেস্টুরেন্ট থেকে কমপক্ষে ১৫টির বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, ভবনটির নিচতলায় চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে মুহূর্তে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। মাত্র এক মাস আগে ভবনটির নিচতলায় চায়ের চুমুক রেস্টুরেন্টটি যাত্রা শুরু করেছিল।

আরও পড়ুন <> বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে পুলিশের মামলা

এদিকে শুক্রবার হস্তান্তর করা মরদেহের মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর মগবাজারের সৈয়দ মোবারক হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪১), দুই মেয়ে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জহুরা কাশপিয়া (১৬), আমেনা আক্তার নূর (১৩) ও ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৮)। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার করিম লাকী (৪৭) ও তার মেয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি তাজরিন নিকিতা (২১)। শান্তিবাগ এলাকার পপি রায় (৩৩) এবং তার মেয়ে সম্পূর্ণা পোদ্দার (১২) ও ছেলে সংকল্প সান (৮)।

মতিঝিল আরামবাগের নাজিয়া আক্তার (৩১) তার দুই সন্তান আয়ান (৮) ও আয়াত (৬)। মতিঝিল এজিবি কলোনির আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহরান কবির দোলা (২৯) এবং তার ছোট বোন মাইশা কবির মাহি (২১)। কাকরাইলের ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২) ও সাদিয়া আফরিন আলিশা (১৩)। 

অপরদিকে, বেইলি রোডে আগুনের প্রাণ হারানোর তালিকায় রয়েছেন দুই নারী দাবাড়ুর মা শম্পা সাহা (৪৫)। তার দুই মেয়ে শ্রেয়া পোদ্দার ও প্রজ্ঞা পোদ্দার বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের রেটিং ও নারী দাবার অনেক টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নেন। আরও আছেন, খিলগাঁওয়ের আশরাফুল ইসলাম আসিফ (২৫) ও তুষার হাওলাদার (২৩), বংশালের নুরুল ইসলাম (৩২), নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেন (২৪), মাদারীপুরের মোহাম্মদ জিহাদ (২২), যশোরের কামরুল হাসান রকি (২০), ভোলার দিদারুল হক (২৩), মৌলভীবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম (৬৫), টাঙ্গাইলের মেহেদী হাসান (২৭), মুন্সীগঞ্জের জারিন তাসনিম খান প্রিয়তি (২০) ও গুলশানের জুয়েল গাজীর (৩০)। 

মরদেহ নেয়া হয়েছে ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী পাবনা ফরিদপুরের সাগর হোসেন (২৪), পিরোজপুরের তানজিলা নওরিন এশা (৩৫) ও শেরপুরের শিপন (২১), বুয়েট শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন (২০) ও লামিশা ইসলামের (২০)। এ ছাড়া বরগুনার ছেলে নাঈম (১৮), ভোলা সদরের সিরাজুল ইসলামে ছেলে নয়নের (১৭) লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ছাড়া বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ভর্তি আছেন— ফয়সাল আহমেদ (৩৮), সুজন মন্ডল (২৪) প্রহিত (২৫) আবিনা (২৩) রাকিব হাসান (২৮) কাজি নাওশাদ হাসান আনান (২০), আজাদ আবরার (২৪), মেহেদী হাসান (৩৫), রাকিব (২৫) ও সুমাইয়া (৩১), জহিরুল (২৬) এবং ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন ইকবাল হোসেন (২৪), ও যোবায়ের (২১)।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, গ্রিন কোজি কোটেজ নামে ভবনটির ডেভেলপার আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। ভবনটির সব ফ্লোর ব্যবহার হচ্ছিল বাণিজ্যিকভাবে। তবে রেস্টুরেন্টের জন্য ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না এ ভবনের।

এদিকে, ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় মামলা করা করেছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে রমনা থানা পুলিশ বাদী হয়ে করা ওই মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।

এর আগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনটিতে অবস্থিত চায়ের চুমুকের দুই মালিক ও কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তথ্য জানতে হেফাজতে নেয়া হয়েছে আরও কয়েকজনকে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়