Apan Desh | আপন দেশ

বেইলি রোডের আগুন ইলেকট্রিক কেটলি থেকে 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৬ মার্চ ২০২৪

বেইলি রোডের আগুন ইলেকট্রিক কেটলি থেকে 

ফাইল ছবি

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের সূত্রপাত ইলেকট্রিক কেটলি থেকে। ভবনটির নিচতলার ‘চা চুমুক’ নামের চা-কফি তৈরির দোকানে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক কেটলি থেকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আগুনের তাপে এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের গ্যাসে আগুন ধরে যায়।

আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া চার জনের মধ্যে দুই জন পুলিশের রিমান্ডে এমন তথ্য জানিয়েছেন।ওই ভবনের নিচতলায় ‘চা চুমুক’ দোকানের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানিয়েছেন।

অপরদিকে, চা চুমুক দোকানের ওই দুই ব্যক্তির তথ্যের সত্যতাও পেয়েছে বিস্ফোরক অধিদফতর। সংস্থাটির একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ইলেকট্রিক কেটলি বিস্ফোরণের নমুনা পেয়েছে। এ থেকে বিস্ফোরক অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নয়; ইলেকট্রিক কেটলি বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানান, তাদের পরিদর্শক দল কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আলামত দেখতে পায়নি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে সিলিন্ডারের ধ্বংসাবশেষ থাকত, চতুর্দিক বিস্ফোরিত সিলিন্ডার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। অন্যরকম একটি পরিবেশ থাকত। কিন্তু এ রকম কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। এমন নয়, আগুন লাগার পর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এখানে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। তবে আমরা ইলেকট্রিক কেটলির ধ্বংসাবশেষ পেয়েছি, পোড়া তারও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় যেহেতু মামলা হয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত চলমান। তারা ঘটনাটি উদঘাটন করবে।

তিনি বলেন, এমন আগুনের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে থাকে। ফায়ার সার্ভিস কিংবা পুলিশ যদি মনে করে তখন আদালতের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত আলামত বিস্ফোরক অধদফতরে পাঠালে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আলামত পরীক্ষার জন্য তাদের বলা হয়নি। কিন্তু আগুনে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটায় এবং সেখানে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তারা ঘটনাস্থলটি পরিদর্শন করেছেন। তাদের টিম সেখানে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যেরও উপস্থিতি পাননি।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন পুলিশকে জানিয়েছেন, ইলেকট্রিক কেটলিটিতে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। তখন তারা দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে কিছুতেই আগুন নিভছিল না। একপর্যায়ে কেটলির আশপাশে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্রে আগুন ধরে যায় এবং পুরো দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।  অন্যদিকে, ভবন থেকে পুলিশ অক্ষত ১১টি গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ছয়টি ছোট এবং পাঁচটি বড় গ্যাস সিলিন্ডার। সেগুলো রমনা থানায় রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন <> শিক্ষকরা কোচিং করালে দায়ী প্রতিষ্ঠানপ্রধান

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনছার মিলটন বলেন, উদ্ধার আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তের স্বার্থে যা যা করা দরকার, সবই করা হচ্ছে। যাদের অবহেলায় ঘটনাটি ঘটেছে, তাদের শাস্তি যাতে নিশ্চিত হয় সেভাবেই তদন্ত চলছে।

ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) পক্ষ থেকেও ঘটনার পরপর ভবনটি পরিদর্শন করা হয়। তখন তারা কিছু আলামত সংগ্রহ করেন ও খতিয়ে দেখেন। 

ইসাব’র সাধারণ সম্পাদক জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিদর্শনে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া যায়নি। যেসব গ্যাস সিলিন্ডার ওই ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে ছিল, সেগুলো আগুন লাগার পরও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভবনে নিম্নমানের একটি আগুন নির্বাপক ছিল। সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে। স্যুয়ারেজ লাইনেও বিস্ফোরণ ঘটেছে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রিন কোজি কটেজে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুরে বেইলি রোডের ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। ভবনটির সামনে ফিতা দিয়ে রাখা হয়েছে। সংস্থা অথবা সংশ্লিষ্টরা দফতরের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। ওখানকার ফুটপাত ধরে হেঁটে আসা লোকজন ভবনটি বরাবর এসেই তাকিয়ে থাকছেন পোড়া ভবনের দিকে। উৎসুক জনতা মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, অগ্নিনির্বাপণের পর তারা ভবনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ভবনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জন মারা যান। এ ঘটনায় এখনো ছয়জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেশ কয়েকজন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়