Apan Desh | আপন দেশ

আত্মহননকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী?

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ১৭ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৯:৪৭, ১৭ মার্চ ২০২৪

আত্মহননকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী?

প্রতীকী ছবি

আত্মহত্যা বা আত্মহনন হচ্ছে ব্যক্তি কর্তৃক স্বেচ্ছায় নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। লাতিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে ইংরেজি ‘সুইসাইড’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে আত্মহত্যা বা নিজেকে হত্যা করা। যখন কেউ আত্মহত্যা করে, তখন এ প্রক্রিয়াকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। ডাক্তার বা চিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

আত্মহত্যা পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যিনি নিজেই নিজের প্রাণ বিনাশ করেন, তিনি আত্মঘাতক, আত্মঘাতী বা আত্মঘাতিকা, আত্মঘাতিনীরূপে সমাজে পরিচিত হন।

ইসলামে আত্মহত্যার ভয়াবহতা

ইসলামী দৃষ্টিকোণে আত্মহত্যা একটি জঘন্যতম মহাপাপ। আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে একমাত্র আল্লাহই জীবন দেন এবং একমাত্র তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ। এবং কবিরা গুনাহ।

মহান আল্লাহ এমন কাজকে মোটেই পছন্দ করেন না। যদিও ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনায় আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়া বৈধ, তবু রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে কখনো আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়াননি। সাহাবিদের দ্বারা তা পড়ানো হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৮; নাসায়ি, হাদিস: ১৯৬৪; আবু দাউদ, হাদিস: ৩১৮৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫২৬)

আরও পড়ুন>> ইসলামে অন্যকে গালি দেয়া সম্পূর্ণ হারাম

আত্মহত্যা ইসলামি শরিয়তে জঘন্যতম একটি পাপ। আত্মহত্যা ইহকাল, পরকাল উভয়টি ধ্বংস করে দেয়। যেকোনো কারণেই হোক না কেন, আত্মহত্যা মহাপাপ। জঘন্যতম পাপ। আত্মহত্যা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারণ করে গেছেন।

মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?

আগেকার দিনের ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিবেচনা করলে দেখা যায়, আত্মহত্যার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তা হলো—

১.  সাংসারিক কলহ-দ্বন্দ্বে পড়ে।

২.  অতিরিক্ত রাগের কারণে।

৩.  কাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু লাভ করতে না পারলে।

৪.  নিরাশ বা বঞ্চিত হওয়ার কারণে।

৫.  লজ্জা ও মানহানিকর কোনো কিছু ঘটে যাওয়া বা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকাশ হওয়ার কারণে।

৬.  অভাব ও দরিদ্রতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হওয়ার কারণসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে।

এছাড়া আরও যেসব কারণে আমাদের সমাজে জঘন্য এ কাজটি ঘটে। তা হলো—

১.  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য।

২.  যৌতুকের কারণে ঝগড়া-বিবাদ।

৩.  পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্য।

৪.  পরীক্ষায় ব্যর্থতা।

৫.  হারাম প্রেম-বিরহ।

৬.  মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়ে।

৭.  ব্যবসায়ে বারবার ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি কারণে যখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে বসে।

আল-কোরআনে আত্মহত্যা প্রসঙ্গ

মহান আল্লাহ মানুষের জীবন ও মৃত্যুর মালিক। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না। অতএব, কেউ যদি নিজের মৃত্যু ঘটায়, তাহলে সে অনধিকার চর্চা করে। আর আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিণামের কথা ভাবার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-

এক. ‘তোমরা আত্মহত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ২৯)

দুই. ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কোরো না।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

তিন. ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ যাবতীয় অপরাধ মার্জনা করেন।’ (সুরা: জুমার, আয়াত: ৫৩)

আল-হাদিসে আত্মহত্যার পরিণতি

এক. জাবির বিন সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এক সাহাবি আহত হন। এর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি তার তীরের ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জানাজার সালাত পড়াননি। বর্ণনাকারী বলেন, তা ছিল তার পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় (শাস্তিস্বরূপ)। (তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৮; নাসায়ি, হাদিস: ১৯৬৪; আবু দাউদ, হাদিস: ৩১৮৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫২৬)

দুই. সাবিত বিন যাহহাক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৬৩; মুসলিম, হাদিস: ২০২; তিরমিজি, হাদিস: ২৬৩৬)

আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী?

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস মতে, আত্মহত্যাকারী চিরজাহান্নামী হবে না। আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, তার অপরাধ অনুযায়ী আজাব দেবেন, তারপর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। পরিশেষে, ইসলামি অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে আত্মহত্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়