Apan Desh | আপন দেশ

ছোটদের জীবনে রোজার প্রভাব

মুফতি আবদুল্লাহ হাসান

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২৪ মার্চ ২০২৪

ছোটদের জীবনে রোজার প্রভাব

ছবি: সংগৃহীত

রমজান মাসের পবিত্রতা বড়-ছোট সবার মধ্যেই প্রভাব বিস্তার করে। বড়রা যে কাজ করে, ছোটদের মধ্যেও সেটার প্রভাব পড়ে। মূলত মানুষের স্বভাব ও অভ্যাস গড়ে ওঠে ছোটবেলায়। বড় হয়ে মানুষ সে কাজটিই করে, যা সে ছোটবেলায় দেখে ও অভ্যাস করে। তাই রমজান মাসের রোজা রাখতে ছোটদের উৎসাহ দেয়া, তাদের নিয়ে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়া, একসঙ্গে সেহরি ও ইফতার করা অনেক ফলদায়ক কাজ। 

ঘরের ছোট সদস্যরা রোজা রাখলে সবার সামনে বাহবা দেয়া, প্রশংসা করা, সম্ভব হলে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা, তাদের পছন্দমতো ইফতারের অফার করা জরুরি। এতে ছোটরা আরও উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হবে। এভাবে ধীরে ধীরে নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদতে তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

যেসব শিশুদের ছোটবেলায় রোজা রাখতে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা হয় না, পরিবারে রোজা রাখার শিক্ষা দেয়া হয় না, তারা বড় হলে রোজা রাখতে পারে না বা রাখলেও প্রচণ্ড কষ্ট হয়। পক্ষান্তরে যেসব সন্তানদের ছোটবেলাতেই রোজা রাখার শিক্ষা দেয়া হয়, মা-বাবা সঙ্গে নিয়ে তারাবি নামাজ পড়েন, একসঙ্গে সেহরি খান, ইফতার করেন, সন্তানদের দিয়ে পাশের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর বাসায় ইফতার পাঠান, সেই সব শিশুদের বড় হয়ে রোজা রাখতে একটুও কষ্ট হয় না। বরং তারা রোজা না রাখলে মনের ভেতর এক ধরনের অস্বস্তি ও অশান্তি অনুভব করে। আর হ্যাঁ, শিশুদের রোজার সওয়াব তাদের মা-বাবারা প্রাপ্ত হন।

দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো কোনো মা-বাবা শিশুদের তো দূরের কথা, রোজা ফরজ হয়েছে-এমন সন্তানদেরও রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করেন বা রাখতে দেন না। এই ভয়ে যে, রোজা রাখলে গরমে তাদের কষ্ট হবে, শরীর শুকিয়ে যাবে, পড়াশোনা করতে পারবে না, পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হবে ইত্যাদি। 

আশ্চর্য, তারা সন্তানদের ইহকালীন পরীক্ষাকে ভয় করেন অথচ আখেরাতের মহাপরীক্ষাকে ভয় করেন না। দুনিয়ার সামান্য কষ্টকে ভয় করে অথচ জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভয় করে না। সন্তানদের দুনিয়াবি জীবনের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে অথচ আখেরাতের জীবনের শেষ পরিণামের কথা ভাবে না। 

তাছাড়া ডাক্তারি শাস্ত্র এবং বিজ্ঞানও বলে- বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে উপোস থাকলে মানে রোজা রাখলে মানুষের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং শারীরিক অনেক উপকারিতা লাভ হয়।

রাসূল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী মনীষীরাও ছোটদের রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতেন, উৎসাহ জোগাতেন। শুধু তাই নয়, অভিভাবকদেরও বলতেন যেন তাদের শিশুদের রোজা রাখতে উৎসাহ দেন। ওমর (রা.) রমজানে এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমার জন্য আফসোস! আমাদের ছোট শিশুরা পর্যন্ত রোজাদার অথচ তুমি রোজা রাখো না।’ 

এরপর ওমর (রা.) তাকে প্রহার করেন। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ইবনে সিরিন, ইমাম জুহুরি ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-সহ পূর্ববর্তী বহু মনীষী শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানোকে মুস্তাহাব ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, নামাজের মতো ৭ থেকে ১০ বছরের শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানো যায়। (ফাতহুল বারি: ৫/৩)

রুবাইয়ি বিনতে মুআব্বি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আশুরার সকালে (রা.) আনসারদের সব পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি রোজা পালন করেনি, সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে আর যার রোজা অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন রোজা পূর্ণ করে। তিনি (রুবাইয়ি) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ওই দিন রোজা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোজা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম’ (বুখারি ও মুসলিম)। 

এজন্য সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই নামাজ-রোজা ও শিষ্টাচারের শিক্ষা দিন। নামাজি সন্তান বড় হয়ে ভালো মানুষ হবে। কখনো সে মিথ্যা বলবে না, ধোঁকাবাজি করবে না মানুষের সঙ্গে। তাই ছোট থেকেই শিশুর মনে গেঁথে দিন ধর্মের মালা। ধার্মিক শিশুরা আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলে হয়তো আল্লাহ এ বিশ্বকে মহামারিমুক্ত করবেন। স্মার্টফোনে আসক্ত এ প্রজন্মের শিশুদের ধর্মানুরাগী হওয়া সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য খুবই জরুরি।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়