Apan Desh | আপন দেশ

শবে কদরে ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৪২, ৭ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ০০:৪৩, ৭ এপ্রিল ২০২৪

শবে কদরে ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা

ফাইল ছবি

সারাদেশে ২৬তম রমজানের দিবাগত রাতে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র শবে কদর। রাজধানীর মসজিদে মসজিদে চলছে শবে কদরের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ আলোচনা। সারাদেশের মসজিদ ও বাড়িতে বসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকিরের মাধ্যমে পূণ্যময় রাত্রটি পার করছেন। অনেকে প্রিয়জনের মাগফেরাত কামনায় কবর জিয়ারত করছেন।

শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে দেখা গেছে, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ভিড়। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে শবে কদর পালন করতে মুসল্লিরা আসছেন এই মসজিদে। কেউ কেউ আসছেন বন্ধুদের নিয়ে এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে। 

তারাবিহ নামাজ শেষে মুসল্লিরা ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত বন্দেগি করছেন। কেউ কেউ দলবেঁধে জিকির করছেন। মসজিদ জুড়ে কেউ কদরের নামাজ আদায় করছেন, কেউবা আবার কোরআন শরিফ পড়ছেন।

এদিন মসজিদে খতমে তারাবিহ সম্পন্ন হয়। এরপর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত হয়। তারাবিহতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা. বশিরুল আলম ও মুফতি মাওলানা সাকিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান। গুনাহ মাফ ও ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি মোনাজাতে তিনি দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। সারাবিশ্বের মুসলমানদের মঙ্গল কামনা করে দোয়া করেন।

মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ রাত তারা নফল ইবাদতের মধ্যে কাটিয়ে দেবেন। সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা ও সুখ-শান্তি কামনায় দোয়া করছেন তারা। এ ছাড়া চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও জানান।

ইসলাম ধর্মের বিধানমতে এবং কোরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যায় জানা যায়, ২০ রমজানের পর যে কোনো বিজোড় রাত শবে কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাতে শবে কদর আসার সম্ভাবনা বেশি বলে আলেমদের অভিমত। 

পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্য সময়ে এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, কদরের রাতের ইবাদতে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন <> পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ

মহামহিমান্বিত এ রাত মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সেরা নেয়ামত। পবিত্র কোরআনের সুরা কদরে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কদরে। আর তুমি কি জানো মহিমান্বিত কদরের রাত কি? লায়লাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ।’

সুরা কদরে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘এ রাতে (কদর) ফেরেশতারা এবং জিবরাইল (আ.) তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। এটি নিরাপত্তা যা (সন্ধ্যা থেকে) সুবহে সাদেক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা কদর ৪-৫)।

মহানবি (স.) বলেন, ‘এ রাতের মর্যাদা এক হাজার মাস থেকে উত্তম।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা নম্বর-১৭৩) মহানবি (স.) আরও বলেন, ‘যখন কদরের রাত উপস্থিত হয়, তখন জিবরাইল (আ.) বিরাট এক দল ফেরেশতাসহ পৃথিবীতে আসেন।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা নম্বর-১৮২)। 

আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং এ রাতের দুটি নাম রেখেছেন। ১. লাইলাতুল কদর বা মহাসম্মানিত রাত; ২. লাইলাতুল মোবারাকা বা বরকতময় রাত। এ রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয়ে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহর খাস রহমত সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে।

এ লাইলাতুল কদর কোরআন নাজিলের রাত। এ রাতে পৃথিবীর নিকটতম আকাশে আল্লাহ তার রহমত পুঞ্জিভূত করেন এবং মানুষের প্রার্থনা কবুল করেন। আর তার প্রিয় বান্দাদের ওপর রহমত নাজিল করেন। এ রাতে ইবাদত করা হলে পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করা হয়। (বুখারি প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা-১০)। 

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে ইবাদত করে তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করা হয়। (বুখারি)। 

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, চার শ্রেণির লোককে আল্লাহ তায়ালা এ রাত্রিতে ক্ষমা করেন না। তারা হলো— ১. মদ খোর; ২. মাতা-পিতার অবাধ্যচারী নাফরমান; ৩. আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদকারী এবং ৪. অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণকারী। (আত-তারগিব ২য় খণ্ড)।

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে রোববার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়