Apan Desh | আপন দেশ

ভাগনের হাতেই শেষ পুরো পরিবার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৯:৫৪, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪

ভাগনের হাতেই শেষ পুরো পরিবার

ছবি: সংগৃহীত

মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের কাছে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ। পরিশোধে অপারগ ভাগনে রাজীব কুমার ভৌমিক। দায় থেকে মুক্ত হতে মামাকে সপরিবারে হত্যা করেন। একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন। রাজীব সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথের ছেলে। 

তাড়াশ উপজেলায় একই পরিবারের সবাইকে (বাবা-মা ও মেয়ে) গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার রহস্য ১২ ঘণ্টার মধ্যেই উদঘাটন করেছে পুলিশ। জড়িত একমাত্র আসামি রাজীব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেফতার করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাঁসুয়া ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে।  

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল।  

তিনি বলেন, তাড়াশের গোপালজিউ মন্দিরের পাশের একটি ফ্ল্যাট সপরিবারে থাকতেন বিকাশ সরকার (৪৫)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকে তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৫), মেয়ে পারমিতা সরকার তুষি (১৫) ও তার গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় নিহত স্বর্ণা রানী সরকারের ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।


 নিহত বিকাশ সরকার ও তার পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পরই পুলিশের ২০ সদস্যের একটি দল তদন্ত শুরু করে। শুরুতে আমরা হত্যার অ্যাঙ্গেলগুলো কি হতে পারে, তা স্থির করি। ভুক্তভোগী বিকাশ ও তার ভাগিনার (ভাগনে) মধ্যে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও পাই। এখান থেকেই আমরা ক্লু পেয়ে যাই। দুপুরের দিকে নিশ্চিত হই যে, এ হত্যাকাণ্ডে ভাগিনা রাজীব জড়িত। এরপর তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার দায় স্বীকার করেন তিনি। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পরপরই একে একে তিনজনকে হত্যা করেন তিনি।  

আরিফুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশের সঙ্গে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন রাজীব। তাকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন বিকাশ। ব্যবসা করে রাজীব তার মামাকে ধাপে ধাপে লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন। 

‘কিন্তু রাজীবের কাছে আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিকাশ। ২২ জানুয়ারি। ওই টাকা সাতদিনের মধ্যে ফেরত দিতে রাজীবকে চাপ দেন। বোন অর্থাৎ রাজীবের মা প্রমীলা রানীকে ফোনে বকাবকি করেন। রাজীব টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। এতে তার মামা বকাবকি করেন। মামার কথায় কষ্ট পেয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।’ 

খুনের বর্ণনায় রাজীব জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ২৭ জানুয়ারি। সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি লোহার রড, একটি হাঁসুয়া সংগ্রহ করেন। বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে মামাকে ফোন করেন। পাওনা টাকা ফেরত দিতে বাসায় আসতে চান। বিকাশ সরকার তখন তাড়াশের বাইরে কাটাগারি বাজার এলাকায় ছিলেন। তিনি টাকা নিয়ে বাসায় এসে থাকতে বলেন।

আরও পড়ুন>> ঘরে মিলল বাবা-মা ও মেয়ের গলাকাটা মরদেহ

রাজীব যথারীতি বাসায় আসেন। বাসাটি তিনতলা। মামি স্বর্ণা রানী তাকে কফি খাওয়ানোর জন্য নিচের দোকানে যান। সেই সুযোগে রাজীব মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষির ঘরে ঢুকেন। লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তুষি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে কফি নিয়ে স্বর্ণা বাসায় ঢুকেন। তাকেও পেছন থেকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন রাজীব। 

কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করেন। পরে গলা কেটে হত্যা করেন। মামি ও মামাতো বোন গোঙাতে থাকলে তাদেরও গলা কাটে, মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তাদের মরদেহ বেডরুমে রাখেন। পরে প্রধান দরজায় তালা মেরে পালিয়ে যায় রাজীব।  

পুলিশ সুপার বলেন, রাজীবের দেয়া তথ্যমতে, তাড়াশে উৎপল কর্মকারের পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রড, তার বাড়ি থেকে হাঁসুয়া জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রে পাওয়া রক্তের নমুনা সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।  

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়