Apan Desh | আপন দেশ

এক পায়ে তিন কিমি হেঁটে কলেজে যান ইয়াছমিন

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৩০ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১০:৩৪, ৩০ মার্চ ২০২৪

এক পায়ে তিন কিমি হেঁটে কলেজে যান ইয়াছমিন

ছবি: আপন দেশ

নোয়াখালীর ইয়াছমিন আক্তার (২০)। তার এক পা নেই। আরেক পা থাকলেও তা প্রায় শীর্ণ। ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করেন। প্রতিদিন এভাবেই প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে কলেজে যান। তার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের গাংচিল গ্রামে। বাবা দিনমজুর নুরনবী।

দেড় বছর বয়সে এক পা হারান ইয়াছমিন। এরপর কঠিন বাস্তবতা নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ১৯ বসন্ত। তবুও কঠিন জীবন সংগ্রামে দমে যাননি। দারিদ্রতা আর শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে সে এখন সদর উপজেলার ড. বশির আহমদ কলেজের শিক্ষার্থী। দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগে পড়ছেন।

২০০৫ সালের ঘটনা। মা শিশু ইয়াছমিনকে বিছানায় রেখে পাশের বাড়ি থেকে পানিতে আনতে যায়। তখন চৌকির পাশে থাকা চেরাগ থেকে মশারিতে আগুন ধরে যায়। ওই আগুনে ইয়াছমিনের দুই পা দগ্ধ হয়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়। পায়ের রগ পুড়ে অপর পাও অনেকটা শীর্ণ হয়ে যায়। 

এরপরও উদ্যম ইচ্ছাশক্তিতে প্রথমে ভর্তি হন পশ্চিম গাংচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে গাংচিল কবি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে প্রথমে গাংচিল বাজারে যান। পরে সেখান থেকে গাড়ি করে বাড়ি থেকে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার দূরে কলেজে ক্লাস করছেন নিয়মিত। আবার বাড়ি ফিরতেও তাকে হাঁটতে হয় দেড় কিলোমিটার পথ। এভাবে বয়ে চলেছেন জীবনের ভার। বছরে পাঁচ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী সরকারি ভাতা পান। কিন্তু সরকারের এ সহযোগিতা একেবারেই অপ্রতুল। 

ইয়াছমিন আক্তার বলেন, অনেক কষ্ট করে আমি লেখাপড়া করছি। পড়ালেখা শেষ করে আমি শিক্ষক হতে চাই। সবার সহযোগিতায় একটি কৃত্রিম পা সংযোজন হলে আমার স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে। 

ইয়াছমিনের বাবা নুরনবী বলেন, আমি একজন দিনমজুর। তবে শত কষ্ট-যাতনা সহ্য করে হলেও মেয়েকে লেখাপড়া করাব। একটি কৃত্রিম পা সংযোজনে সমাজের বিত্তবান মানুষ এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা তার।

ড. বশির আহমদ কলেজের প্রভাষক এএইচ তানিম বলেন, আমরা তার কষ্টকে মূল্যায়ন করি। একই সঙ্গে তার চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কেননা ইয়াছমিন যেটা সম্ভব করে চলেছেন তা সবার কাছেই অনুপ্রেরণা ও দৃষ্টান্ত।   
   
ওই কলেজের অধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা মুক্তা বলেন, ইয়াছমিন প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ এক পায়ে হেঁটে কলেজে আসে। সে একজন সংগ্রামী তরুণী। অদম্য প্রচেষ্ঠায় তার গল্পটি হয়ে উঠেছে প্রেরণার। দিনমজুর বাবা সব কিছু হারিয়ে মেয়েকে সারিয়ে তুললেও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না সে। তাদের আকুতি যদি কৃত্রিম পা দিয়ে হাঁটত পারত ইয়াসমিন।  

আপন দেশ/জিআর/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়