Apan Desh | আপন দেশ

‘শিশুসাহিত্যিক’ টিপুর পর্নো ভিডিওর মডেল ছিন্নমূল শিশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘শিশুসাহিত্যিক’ টিপুর পর্নো ভিডিওর মডেল ছিন্নমূল শিশুরা

ছবি : সংগৃহীত

ছেলেশিশুদের দিয়ে টিপু কিবরিয়া পর্নো ভিডিও তৈরি করতেন। তার গ্রাহক বিদেশে ছড়িয়ে আছে। তালিকায় ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু মানুষ। তাদের চাহিদা অনুযায়ী তিনি ভিডিও তৈরি করতেন। তিনি আবার এককালের শিশুসাহিত্যিকও।   

ভিডিওতে যাদের ব্যবহার করা হতো, তাদের অধিকাংশই রাজধানীর গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কমলাপুর রেলস্টেশনের ছিন্নমূল শিশু। তাদের কারও বয়সই ১২ বছরের বেশি নয়। তাদের দেয়া হতো ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। এই শিশুদের জোগাড় করে দিতেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা।

পর্নোগ্রাফির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে থাকা টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া ও তার প্রধান সহযোগী কামরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টিপু কিবরিয়ার চার সহযোগীর নাম ও ছবি পাওয়া গেছে। তারা পেশায় ভাঙারি ব্যবসায়ী।

সম্প্রতি টিপু কিবরিয়ার পর্নো ভিডিওর বিষয়টি অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশের নজরে এলে তারা বাংলাদেশ পুলিশকে চিঠি দেয়। সেই চিঠির সূত্র ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি দল গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। বুধবার আদালত তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার তাদের রিমান্ডের প্রথম দিন। 

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিএমপির সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আহমেদুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শিশু সাহিত্যচর্চার আড়ালে ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি করা শুরু করেন টিপু কিবরিয়া ও তার প্রধান সহযোগী কামরুল ইসলাম। এসব শিশুর মধ্যে ২০-২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের একজন বৃহস্পতিবার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন <> প্রবাসীর স্ত্রীকে ব্লাকমেইল অতঃপর

টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৯১ সালে একটি প্রকাশনীর মাসিক কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদুল ইসলাম বলেন, টিপু কিবরিয়া অশ্লীল ছবি ও ভিডিওগুলো বিভিন্ন পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন। এগুলো দেখে ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু মানুষসহ অনেকে টিপু কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তারা আরও চাহিদা দিতেন। এসব ভিডিও তিনি একাধিক এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের পাঠাতেন। মাত্র তিনটি কনটেন্ট বিক্রি করে এক হাজার ডলার নিয়েছেন, এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বুধবার সিটিটিসির কর্মকর্তারা টিপু ও তার সহযোগীর কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ শিশু পর্নোগ্রাফির সামগ্রী ও পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করেন। এ প্রসঙ্গে সিটিটিসি বলছে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে পাওয়া ছবি ও ভিডিওর মধ্যে ২৫ হাজার ছবি ও এক হাজার ভিডিও গণনা করা সম্ভব হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জব্দ হওয়া কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, মুঠোফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে হাজার হাজার ভিডিও এবং কনটেন্ট পাওয়া যাবে। টিপুর ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে।

সিটিটিসি কর্মকর্তা আহমেদুল ইসলাম বলেন, শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরির ঘটনায় বিশ্বের অনেক দেশে আলোচনায় এসেছিলেন টিপু কিবরিয়া। তদন্তে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ায় বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা ও ইন্টারপোলের সহায়তায় ২০১৪ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) টিপু কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। তবে মামলায় তিনি খালাস পান। প্রায় সাত বছর পর ২০২১ সালে তিনি কারাগার থেকে বের হন। এরপর তিনি সাহিত্যচর্চার আড়ালে আবার শিশু পর্নোগ্রাফির পুরোনো পথে হাঁটতে শুরু করেন। 

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়