Apan Desh | আপন দেশ

সোমালিয়ায় জলদস্যু উত্থানে দায়ী কারা? 

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৪ মার্চ ২০২৪

সোমালিয়ায় জলদস্যু উত্থানে দায়ী কারা? 

ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। শান্তি ও সমৃদ্ধিতে একসময় আফ্রিকার সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু আজ দেশটি এক বিভীষিকার নাম। সোমালিয়ার নাম শুনলেই সবার চোখে ভাসে জলদস্যুদের কথা। তবে প্রাচীনকালে সোমালিয়া ছিল জরুরি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। মধ্যযুগে বেশ কয়েকটি সোমালি সাম্রাজ্য আঞ্চলিক বাণিজ্যের নেতৃত্ব দিত। এর মধ্যে আজুরান সাম্রাজ্য, আদেল সালতানাত, ওয়ারসাঙ্গালি সালতানাত ও গেলেদি সালতানাত উল্লেখযোগ্য। ষাটের দশকে ‘আধুনিক সোমালিয়া’র কাহিনি ছিল স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের।

কিন্তু ১৯৬৯ সালে দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট আলি শারমার তারই দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হন। সোমালিয়া পার্লামেন্টের স্পিকার মুখতার মোহামেদ হুসেইন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। তবে ছয় দিনের মাথায় জেনারেল সিয়াদ বারের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এক সামরিক অভ্যুত্থান। মূলত তখনই অবসান ঘটে সোমালিয়ার গণতান্ত্রিক যুগের। দেশটিতে সামরিক স্বৈরাচারী শাসন চলে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত।

সোমালিয়ার উপকূলের পানি ছিল আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান। কারণ, এ পানিতেই বিচরণ করে টুনা, মার্লিনসহ দামি মাছেরা। এ সম্পদই সোমালিয়ার কাল হলো। বিদেশি মাছ শিকারিদের নজর পড়লো সেখানে। তারা আধুনিক নৌযান ও গভীরে ফেলবার মতো জাল নিয়ে সোমালিয়ার সমুদ্রসীমার মাছ চুরি করতে থাকলো। এতে বেকার হয়ে পড়তে থাকলো সোমালিয়ার সামুদ্রিক জেলেরা।

দ্বিতীয় বিপদটা আরও ভয়াবহ। ১৯৯১ সালে সামরিক শাসন উচ্ছেদের পর সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ লেগে যায়। দীর্ঘ নৈরাজ্যের মধ্যে রাষ্ট্র ভেঙ্গে পড়ে। জাতিসংঘের মাধ্যমে পশ্চিমারা সামরিক হস্তক্ষেপ চালায়। তাছাড়া সোমালিয়ার সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদের জন্যও সেখানে নিয়ন্ত্রণ চায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইতালি ও ফ্রান্স।

নব্বই দশক থেকে একের পর এক মার্কিন আক্রমণ, সিআইয়ের গোপন অভিযান, মার্কিন মদদে ইথিওপিয়ার আগ্রাসনে বিধ্বস্ত দেশটি আর তার দুর্ভিক্ষপীড়িত কোটি খানেক মানুষকে দোজখের সদর দরজা দেখিয়ে দিয়েছে। অথচ তাদেরও বলবার আছে অন্যরকম এক গল্প।

পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রশক্তিগুলো সুযোগ বুঝে সোমালিয়ার খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর উপকূলে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্র্যপদার্থ ফেলতে শুরু করে। সরকার গায়েব হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত থেকেই সোমালিয়ার উপকূলে হানা দিতে থাকে রহস্যময় ইউরোপীয় জাহাজ। তারা বিরাট বিরাট ব্যারেল ফেলতে থাকে সেখানে।

আরও পড়ুন>> জলদস্যুদের দাবি ৫০ লাখ ডলার

উপকূলীয় অধিবাসীরা অসুস্থ হতে শুরু করে। প্রথম প্রথম তাদের গায়ে অদ্ভুত দাগ দেখা দিত, তারপর শুরু হলো বমি এবং বিকলাঙ্গ শিশু প্রসব। ২০০৫ সালের সুনামির পর, তাদের উপকূল ভরে যায় হাজার হাজার পরিত্যক্ত ও ফুটো ব্যারেলে। মানুষ তেজষ্ক্রিয়তায় ভুগতে থাকে। তিন শতাধিক মানুষ মারা যায়।

প্রথমে তারা স্পিডবোট নিয়ে বর্জ্র্য ফেলা ও মাছ ধরার জাহাজ ও ট্রলারগুলোকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে সোমালিয়ানরা। একপর্যায়ে তাদের ওপর ‘ট্যাক্স’ বসানোরও চেষ্টা চলে। এক টেলিফোন সংলাপে জলদস্যুদের এক নেতা সুগুল আলি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ‘বেআইনি মাছ ধরা এবং উপকূল দূষণ থামানো... আমরা জলদস্যু নই... ওরাই জলদস্যু যারা আমাদের মাছ কেড়ে নেয়, যারা আমাদের সমুদ্র বিষ দিয়ে ভরে ফেলে ও আমাদের পানিতে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে।’

জাতিসংঘের ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উৎস থেকে জানা যায়, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা মূলত এ উপকূলে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। 

ডিআইডব্লিউ এবং মার্কিন হাউজ আর্মড সার্ভিসেস কমিটির মতে, বিদেশি জাহাজ থেকে সোমালি উপকূলে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার ফলে স্থানীয়দের পরিবেশ বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজ এ অঞ্চলে প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে বিকল্প আয় হিসেবে তারা বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ মুক্তিপণের জন্য ছিনতাই শুরু করে।

প্রাথমিকভাবে, ২০০০ সালের গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক মাছ ধরার জাহাজগুলোতে হামলা চালালেও, ২০০৬-২০০৯ সালে জলদুস্যুরা আন্তর্জাতিক শিপিংয়ে হামলা চালানো শুরু করে।

২০১২ সালে সোমালিয়ার সরকারের তথ্য অনুযায়ী, জলদস্যুরা প্রাথমিকভাবে দেশের কেন্দ্রীয় অংশের গালমুডুগ অঞ্চল থেকে হামলা ও ছিনতাই পরিচালনা করতো। দেশটির আঞ্চলিক প্রশাসন একটি বড় জলদস্যুতা বিরোধী অভিযান শুরু করার পর এবং মেরিটাইম পুলিশ ফোর্স (পিএমপিএফ) প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত সোমালিয়ার উত্তরপূর্ব প্রদেশ পুন্টল্যান্ডে অবস্থিত বন্দরগুলো থেকে সমুদ্রে হামলা চালাতো জলদস্যুরা।

২০০৫ সাল থেকে জলদস্যুতার জন্য ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি সোমালি যুবক বিদেশে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বেশিরভাগই যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ২০১৫ সালে আল-জাজিরাকে জানিয়েছিল, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন ‘জলদস্যু এবং সন্দেহভাজন জলদস্যু’ ২১ দেশের আদালতে বা কারাগারে রয়েছে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়