ফাইল ছবি
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। দুই ঈদেই আনন্দে মেতে উঠেন মুসলিমরা। আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় সালামি। বিশেষ করে ছোটদের আনন্দ এই সালামির ওপর নির্ভর করে। সবাই চায় সালামির অর্থ যেন চকচকে অর্থাৎ নতুন হয়। এর জন্য ব্যাংকগুলোও বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে থাকে। প্রতি ঈদেই ব্যাংক নতুন টাকার নোট ছাড়ে। গত ৩১ মার্চ থেকে নতুন নোট বিতরণ শুরু হয়েছে। চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
অবশ্য ব্যাংকগুলোর নিয়মরক্ষা করে সাধারণ মানুষ খুব বেশি নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারেন না। তাদের ভরসা ফুটপাতের দোকান। ওইসব দোকানিরা ব্যাংক থেকে কিংবা ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারির সঙ্গে থাকা বিশেষ খাতিরে নতুন টাকা নিয়ে আসেন।
এবারো নতুন টাকা সংগ্রহকারীরা ভিড় জমাচ্ছেন রাজধানীর নতুন টাকা কেনাবেচার দোকানগুলোতে। চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী কিনছেন নতুন টাকার নোট।
নতুন টাকা কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, ঈদের দিন নতুন টাকা সালামি পেলে ছোটরা আনন্দিত হয়। একইসঙ্গে যারা সালামি দিচ্ছেন তারাও এটি উপভোগ করেন। সে কারণেই নতুন টাকা কিনতে এসেছেন।
রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিল নতুন-পুরাতন টাকা বেচাকেনার দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কোথায় গেলে কিছুটা কম দামে কিনতে পারবেন নতুন টাকা। বিক্রেতারাও যুক্ত আছেন ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০ টাকার নতুন এক বান্ডিল ৪০০ টাকা বেশি দামে, ১০০ টাকার বান্ডিল ৩৫০ টাকা, ৫০ টাকার বান্ডিল ৩৫০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিল ২৫০-৩০০ টাকা, ১০ টাকার বান্ডিল ২৮০-৩০০ টাকা, পাঁচ টাকার বান্ডিল ১৫০ টাকা এবং দুই টাকার এক বান্ডিল নতুন নোট ১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন দোকানে এই দর-দামে ১০ থেকে ৫০ টাকা তারতম্য রয়েছে।
আরও পড়ুন <> ঈদের কেনাকাটায় উপচে পড়া ভিড়
গুলিস্তানে নতুন নোটের এক বিক্রেতা মো. মাসুম বলেন, ‘এবার সব সময়ের মতো ১০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি। আর এই নোটেরই দাম তুলনামূলক বেশি।’ নতুন টাকা কিনতে আসা তৌহিদ বলেন, ‘ঈদে সালামি নেয়া আর দেয়া দুটির মধ্যেই আনন্দ আছে। ছোটদের সালামি দিতে তাই নতুন টাকা কিনতে এসেছি। ২০ আর ৫০ টাকার নোটের দুইটা বান্ডিল নিয়েছি।’ মনিরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি ব্যাংক থেকে নতুন নোট নিয়েছি। কিন্তু আরও দরকার। ব্যাংক তো আসলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নোট দেয়। তাই আমার অতিরিক্ত টাকাগুলো এখান থেকে কিনে নিচ্ছি।’
ব্যাংকে নতুন টাকা নেই অভিযোগ করে মতিঝিলে আবুল কায়েস নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি এক ব্যাংকে গিয়েছিলাম নতুন টাকা আনতে। তারা আমাকে বলল নতুন টাকা নেই, এখন আর দেয়া যাবে না। ১ এপ্রিলের আগে নাকি তারা নতুন টাকা বিতরণ করে দিয়েছে। তাই এখান থেকেই কিনতে এলাম।’ বিক্রেতারা দাম বেশি রাখে অভিযোগ করে সাগর নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘দশ টাকার একটা বান্ডিল কারও কাছে ২৮০ টাকা আবার কারও কাছে ৩০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে হাঁকানো হচ্ছে। টাকা তো একই তাহলে একেক দোকানে একেক রকম দাম কেন? কেউ একটু না ঘুরে কিনলেই ঠকবে।’
গুলিস্তানে আলমগীর নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘এই রোজার মাসে আমার আয় হবে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু ঈদ চলে গেলেই সেটা ২০-২৫ হাজারে নেমে আসবে।’
আরেক বিক্রেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘ঈদেই আমরা নতুন টাকাটা বেশি বিক্রি করি। অন্য সময়ে এই বিক্রি খুব একটা থাকে না বললেই চলে।’
অনেকেই খোলা বাজারে টাকা বিক্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংক ছাড়া কেউ বাইরে নতুন টাকা বিনিময় করতে পারবে না। গুলিস্তানে নতুন টাকা বিনিময় হয় ছেঁড়াফাটা টাকার বিনিময়ে। সেক্ষেত্রে হয়তো তারা একটা কমিশন নেয়। কিন্তু নতুন টাকার নোট বিক্রি করা ঠিক নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি বিক্রিই হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিচ্ছেন কেন? পুরাতন হোক আর নতুন হোক টাকা তো একই। তার মানে আপনি মেনে নিয়েই চড়া দাম দিয়ে কিনছেন নতুন নোট। আপনি না কিনলে সে তো জোর করে আদায় করতে পারবে না। আপনি ব্যাংকে শ্রম ও সময় না দিয়ে ওখান থেকে কিনছেন? এতে আপনি লাভবান হচ্ছেন। বিনিময়ে সে সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে।’
আপন দেশ/এমআর