Apan Desh | আপন দেশ

এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১০, ১৫ মার্চ ২০২৪

এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে

ছবি : সংগৃহীত

ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটি এরইমধ্যে সোমালিয়ার একটি বন্দরে নোঙর করেছে। বাংলাদেশি ওই জাহাজে কীভাবে হামলা চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী।

অন্যদিকে কী কারণে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে সে বিষয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে রুয়েন নামে মাল্টিজ-পতাকাবাহী একটি বাল্ক কার্গো জাহাজ আটক করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। দুদিন আগে (মঙ্গলবার) সোমালিয়া উপকূল থেকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী যে পণ্যবাহী জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে; এই কাজে তারা (দস্যুরা) রুয়েনকে ব্যবহার করে থাকতে পারে। খবর রয়টার্সের। 

২০১৮ সাল পর্যন্ত এক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক জলপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছিল সোমালি জলদস্যুরা। এরপর তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড কমে আসলেও, গত বছরের শেষ দিক থেকে বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ আবারো বাড়তে শুরু করে। 

রয়টার্স বলছে, ছিনতাই হওয়া রুয়েন জাহাজ ব্যবহার করে মঙ্গলবার জলদস্যুদের হামলার (বাংলাদেশি জাহাজে) তথ্য সঠিক হয়ে থাকলে তা এই দস্যুদের পুরনো কৌশলে ফিরে আসাকেই বুঝাবে। অর্থাৎ তারা যে আগের মতোই সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এ ঘটনা হবে তারই প্রমাণ।  

ইইউ’র জলদস্যুতা বিরোধী অভিযান ইউন্যাভফর (EUNAVFOR)-এর তথ্যানুযায়ী, ছিনতাইয়ের সময় অন্তত ১২ জলদস্যু এমভি আবদুল্লাহ-তে উঠেছিল। ইউন্যাভফর বলছে, এমভি রুয়েন ছিনতাই করা জলদস্যুরাই এই ছিনতাইকাণ্ডে (বাংলাদেশি জাহাজ) অংশ নিয়ে থাকতে পারে। তবে এমভি আবদুল্লাহ’র ক্রুরা নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে। 

এদিকে ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে জানিয়েছে, অন্যান্য বাণিজ্যিক জাহাজেও হামলা চালানোর জন্য ‘মাদারশিপ’ হিসেবে এই জাহাজটিকে (এমভি রুয়েন) ব্যবহার করা হতে পারে বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। 

আরও পড়ুন <> ইসরায়েলের হামলায় ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত

এদিকে মেরিটাইম বিশেষজ্ঞদের ধারণামতে, চার কারণে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। তাদের মতে, দস্যুতারোধে চিহ্নিত এলাকায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর টহল ছিল না। কম গতিতে চলছিল জাহাজটি, ড্রাফট ছিল বেশি। ঘাটতি ছিল কাঠামোগত নিরাপত্তাব্যবস্থায়ও। 

মেরিটাইম বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা নরমালি তা ট্র্যাকিং করে। যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত তারা জাহাজের রুট সম্পর্কে জানে এবং জাহাজকে মনিটর করে সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, সচরাচর কম ড্রাফট আর দ্রুতগতির জাহাজ আক্রমণ করে না দস্যুরা। কিন্তু এমভি আবদুল্লাহ ছিল বেশি ড্রাফট আর কম গতির জাহাজ। সেই সঙ্গে ছিল না বাড়তি নিরাপত্তা। ফলে জাহাজটিতে সহজেই উঠে পড়েন জলদস্যুরা। 

মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলদস্যুদের ঠেকাতে একসময় আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো বেশ সক্রিয় ছিল ভারত মহাসাগরে। কিন্তু লোহিত সাগরে হুথি বিদ্রোহীদের তৎপরতার কারণে এখন সবার মনোযোগ সেদিকে। ফলে টহল শিথিল হয়ে পড়ায় ভারত মহাসাগরে আবার বেপরোয়া সোমালীয় দস্যুরা। 

গত তিন মাসে ১৪টি জাহাজ ছিনতাই করে জলদস্যুরা, যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন নৌবাণিজ্য দপ্তরের নৌবাণিজ্য দফতরের কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ। 

তবে কেন জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ল, তার পর্যালোচনার চেয়ে এখন জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করার দিকেই মূল মনোযোগ বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।

উল্লেখ্য, মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।

আপন দেশ/এমআর
 

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়