Apan Desh | আপন দেশ

জয়েন্ট স্টকে হারুনের দুর্নীতি, ফাইলবন্দি একযুগ

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৪ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১২:৩৮, ২৩ মার্চ ২০২৪

জয়েন্ট স্টকে হারুনের দুর্নীতি, ফাইলবন্দি একযুগ

ছবি: আপন দেশ

চন্ডীদাস-রজকিনীর কাহিনিকেও হার মানিয়েছে দুদকের একটি অনুসন্ধান। ফাইলটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লাল ফিতায় বন্দি। কর্মকর্তা আসে কর্মকর্তা যায়; কমিশনও অদল-বদল হয়। কিন্তু লাল ফিতার গিট্টু খোলে না। আর কালে কালে ফাইলটি চাপা দেয়া হচ্ছে সংস্থাটির নীতিচ্যুত কর্মকর্তাদের কূটকৌশলে। অবস্থা বুঝে ভাঙা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কারও কারও নাম। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

সূত্রটি জানায়, ২০১৩ সালে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্ম সমূহের পরিদফতর) এক্সামিনার অব একাউন্টস (বর্তমানে সহকারি রেজিস্ট্রার) মো. হারুন-অর-রশীদের দুর্নীতির তথ্য সম্বলিত একটি অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। কয়েক ফর্দের অভিযোগে তার অবৈধ নিয়োগ, নিয়োগলাভের পর দুর্নীতি এবং বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মো. হারুন-অর-রশীদ ১৯৯২ সালে অফিস সহকারি হিসেবে অবৈধভাবে চাকরি নেন। পরবতীতে উচ্চমান সহকারি ও এক্সামিনার অ্যাকাউন্টস পদে পদোন্নতি নেন। ওই প্রক্রিয়া বৈধ ছিল না। পদোন্নতি কমিটি হারুন অর রশীদকে সুপারিশ করেন ইন্সপেক্টর পদে। কিন্তু তার পদোন্নতির চিঠি ইস্যু করা হয় এক্সামিনার হিসেবে।

চাউর আছে বড় ধরনের সুবিধার বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি এ পদোন্নতি বাগিয়ে নেন।

হারুন অর রশীদ স্বল্প বেতনভোগী একজন কেরানি (এলডি ক্লার্ক)। তবে গড়ে তোলেন বিপুল বিত্ত-বৈভব। এর মধ্যে রয়েছে খুলনার টুটপাড়ায় একটি ও বসুপাড়ায় আরেকটি বাড়ি। রাজধানীর মিরপুর থানার পেছনে ৬২, বড়বাগে শেল কোম্পানির ১ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় কিনেছেন সাড়ে ৩ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। রাজধানীর ৩৩, কারওয়ান বাজারে শাহ আলী টাওয়ারের একটি কনসালটেনিন্স ফার্ম খুলেছেন। ফার্মটি পরিচালনা হচ্ছে তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট মাসুদা আক্তারের (মিথিলা) নামে। আদতে সেটা হারুন-অর-রশীদের চেম্বার কাম ফার্ম।

আরও পড়ুন>> ন্যায় প্রতিষ্ঠার দুদকে চলছে অন্যায় 

কোনো কোম্পানি জয়েন্ট স্টকে নতুন নিবন্ধন কিংবা নবায়নের জন্য দাখিল করা হলে হারুন অফিসের গোপনীয় নথিপত্র নিয়ে চলে যান তার চেম্বারে। সেখানে তিনি কোম্পানির কাগজপত্রে ঘাটতি থাকলে সেটিও সৃজন করে ফাইল তৈরি করে দেন। সেই ফাইলই আবার জয়েন্ট স্টকে হারুন পাস করিয়ে দেন। তার ব্যক্তিগতভাবে ফার্ম পরিচালনার বিষয়টি জয়েন্ট স্টকে দীর্ঘদিনের ওপেন সিক্রেট। অনেক কর্মচারি-কর্মকর্তাই জানেন। কিন্তু তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হন তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর একজন এপিএস’র শ্বশুর সম্পর্কীয় আত্মীয় পরিচয় দেন। কর্মকর্তাকে ভয় দেখান। এছাড়া তার আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন বাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদে রয়েছেন-মর্মে গল্প করেন। কর্মকর্তাদের ভয় দেখান। 

এছাড়া হারুন জয়েন্ট স্টকের চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ এবং সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে অভিযোগ দাখিল হলেও দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি দীর্ঘদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখে। বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়। এর মধ্যে দুটি কমিশনেরও পরিবর্তন হয়। একপর্যায়ে কমিশন ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিষয়টি আমলে নিয়ে হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

অনুসন্ধানের জন্য অভিযোগটি ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ পাঠানো হয়। সেখানেও অভিযোগটি দীর্ঘ দিন ধাপাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ২০২১ সালে হারুন অর রশীদের অনুসন্ধান শুরু করেন দুদকের সহকারি পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল। এ কর্মকর্তা ওই বছর ২৭ অক্টোবর সহকারি রেজিস্ট্রার হারুনের চাকরিকালীন উত্তোলিত মোট বেতন-ভাতার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে জয়েন্ট স্টক কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র দেন। পরে রহস্যজনক কারণে অনুসন্ধানটি আর সামনের দিকে যেতে পারেনি। 

হারুন অর রশীদের তথ্য সরবরাহের জন্য জয়েণ্ট স্টক কোম্পানীজ অ্যান্ড ফার্মসের রেজিষ্ট্রার বরারবর দুদকের পত্র

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ায় বদলি হয়ে যাওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল বলেন, আমিতো রিটায়ারমেন্টে চলে এসেছি। আমি ফাইল বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। কার হাতে আছে তা এখন বলতে পারবো না। আপনি ঢাকায় খবর নিন।

এদিকে দুদকের সূত্রটি জানায়, হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানটি এখনো ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে সহকারী পরিচালক রনজিৎ কুমারকে নতুন করে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়েন্ট স্টকের সহকারী পরিচালক হারুন অররশিদ আপন দেশ’কে বলেন, এটিতো (অনুসন্ধান) নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে নিস্পত্তি হয়ে গেছে। এ-ই তো কয়েক মাস আগে।

এক প্রশ্বের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, চিঠি আমার গোপন বিষয় আপনাকে দেখাবো কেন? 

আপন দেশ/এবি/এএসএম

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়