Apan Desh | আপন দেশ

হামাস-ইসরায়েল তুমুল লড়াই কোথায় গিয়ে ঠেকবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ৮ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১১:১১, ৮ অক্টোবর ২০২৩

হামাস-ইসরায়েল তুমুল লড়াই কোথায় গিয়ে ঠেকবে?

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। হামলার প্রথম ২০ মিনিটেই পাঁচ হাজার রকেট ছোড়ার কথা জানিয়েছে হামাস। সেই সঙ্গে ইসরারেলের ভেতরে ঢুকেও হামলা চালানো হয়েছে বলে তেলআবিব থেকে জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, হামাসের বন্দুকধারীরা বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনদের হত্যা করেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রতিশোধ নিতে বিমান হামলা শুরু করে গাজায়। অথচ হামাসের এই হামলা পরিকল্পনার বিষয়ে বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেনি ইসরায়েলের ডাকসাইটে গোয়েন্দারা।

হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০। এ ছাড়া হামাসের ভয়াবহ এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় এক হাজার ৬০০ ইসরায়েলি। রোববার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। চিকিৎসা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিব্রু ভাষার মিডিয়া রিপোর্টে হতাহতের এই সংখ্যা বলা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেলসহ সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে ৫৩ জন ইসরায়েলিকে ‘যুদ্ধবন্দি’ করে গাজায় নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছে হামাস।

এর জবাবে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ৬৯৭ জন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

ইতোমধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি এবং হাজারো মানুষের হতাহতের খবরের মধ্যে আরেকটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। ভয় ও আতঙ্কে উভয় দেশের বাসিন্দারা অনিশ্চিত রাত্রিযাপন শুরু করেছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ১৯৪৮ সালের পর- অর্থাৎ গত ৭৫ বছরে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি দখলদার ইসরারেল।

এদিকে অবরুদ্ধ গাজার অন্তত সাতটি এলাকার বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িঘর ছেড়ে সিটি সেন্টার বা অন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। এরইমধ্যে অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

অন্যদিকে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। রোববার এ বৈঠক ডাকার কথা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

বিবিসির আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর সম্পাদক জেরেমি বাওয়েন বলেছেন, ১৫ বছর আগে হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু এই ১৫ বছরে তারা কখনো এ ধরনের কোনো কিছু করেনি। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে মাঝে মাঝে সংঘর্ষ হয় হয়। কিন্তু সেগুলো মূলত পশ্চিম তীরে হয়ে থাকে। এই পশ্চিম তীর জেরুজালেম থেকে শুরু করে জর্ডান সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।

শনিবার সকালে যেভাবে হামাসের শত শত যোদ্ধা ইসরায়েলে প্রবেশ করেছেন তা ইসরায়েলিরা কখনো কল্পনাও করেনি। এ ছাড়া চেকপোস্টে থাকা ইসরায়েলি সেনাদের যেভাবে হামাসের সদস্যরা ধরে নিয়ে এসেছেন সেটি অনেকের কাছে বিষ্ময় মনে হয়েছে।

তবে হঠাৎ কেন এমন কঠোর সামরিক অবস্থান নিল হামাস? আল জাজিরার তথ্যমতে, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের ইতি টানতেই হামাস এ সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে। 

‘অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম’ পরিচালনার মাধ্যমে দশকের পর দশক ধরে চলা ইসলায়েলি দখলদারিত্ব, শোষণ ও বঞ্চনার জবাব দেয়া হচ্ছে বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন হামাস মুখপাত্র খালেদ কারামি।

আরও পড়ুন <> গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে পাল্টা হামলা, ১৯৮ ফিলিস্তিনি নিহত

তিনি বলেন, আমরা চাই বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং পুরো বিশ্বের মানুষ আমাদের ওপর পরিচালিত অত্যাচারের কথা জানুক। আমরা চাই আমাদের মানুষ এবং আমাদের ভূখণ্ডের ওপর, আমাদের পবিত্র প্রার্থনা কেন্দ্র আল-আকসার দখলদারিত্ব থেকে ইসরায়েলিরা সরে যাক। অনেক বছরের পুঞ্জিভূত অত্যাচার ও দখলদারিত্বের জবাব দিতেই আমরা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছি। ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং শোষণের অবসানে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে হামাসের সামরিক কমান্ডার মুহাম্মদ দেইফ বলেন, আমরা অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম শুরু করে দিয়েছি। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান হবে। দেশপ্রেমিক সব ফিলিস্তিনিকে যুদ্ধে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শনিবারের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ সব মিত্রদেরই পাশে পেয়েছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামলার পর বলেছেন, তারা ইসরায়েলের পাশেই আছেন। কোনো ভুলের সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একই ভাবে ইরানসহ ফিলিস্তিনের মিত্ররাও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন ও তুরস্কে হামাসের হামলার সমর্থনে মিছিল হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে ইসরায়েল বলেছে, এ হামলার জন্য একমাত্র হামাস দায়ী এবং তাদের এর ফল ভোগ করতে হবে। ইসরায়েল গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।

এদিকে, প্রতিবেশী দেশে সংঘাতের জেরে লেবানন ইসরায়েল সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি বড় যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ইসরায়েলের মতো হামাসও বলেছে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করছে এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে।

ইসরায়েলের ওপর মিশর ও সিরিয়ার আকস্মিক হামলার জেরেই ১৯৭৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। শুক্রবার ছিল সেই যুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকী। পরদিনই হামলা চালায় হামাস।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়