Apan Desh | আপন দেশ

ইরাকে অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমা মিলল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

ইরাকে অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমা মিলল

ফাইল ছবি

অবৈধভাবে (অনিবন্ধিত) বসবাসরত শ্রমিকদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে ইরাক। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৯ মার্চ থেকে আগামী ২ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যে যারা বৈধ হতে পারবেন না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি। দীর্ঘ ১০ বছর পর দেশটির দেয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সেখানকার দূতাবাস।

বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ শাখার প্রথম সচিব এবং চ্যান্সারির প্রধান আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, যুদ্ধসহ নানা ধরনের অস্থিরতার কারণে ইরাক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বৈধকরণ দীর্ঘদিন বন্ধ রেখেছিল। এর ফলে দেশটিতে আসা শ্রমিকরা যারা অনিবন্ধিত হয়ে আছেন, তারা দীর্ঘদিন এই অবস্থায় বসবাস করছেন। এখন যখন দেশটি অনিবন্ধিতদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে, তখন এই সুযোগটা নেয়া উচিত।

ইরাকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা নবায়ন নিশ্চিত করতে এবং এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। দ্রুত পাসপোর্ট নবায়ন থেকে শুরু করে হটলাইনের মাধ্যমে তথ্যসেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ইরাকে বেশিরভাগ বাংলাদেশি কর্মী বৈধভাবে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা আর তা নবায়ন করতে পারেননি। এখন তারা যাতে ইরাক সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার সুবিধা নিয়ে নিজেদের বৈধ করে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, সেই আহ্বান জানিয়েছে দূতাবাস।

তবে শ্রমিকরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেও মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এই সুযোগ নিতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক শ্রমিকই বৈধ হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বেশ কয়েক দফার এই খরচটা অনেক বেশি বলে মনে করছেন তারা। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা অনেক বাংলাদেশি এই সুযোগ সম্পর্কে জানেন না বলেও ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে সাধারণ ক্ষমাকে হালকাভাবে নিচ্ছেন। তারা মনে করছেন অবৈধ কর্মী হিসেবেই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। 

প্রবাসীরা জানান, বিদেশি কর্মীদের নথিভুক্ত করার জন্য ইরাক সরকারের সাধারণ ক্ষমার অধীনে প্রয়োজনীয় যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তাতে অনেক নিয়োগকর্তারই অনাগ্রহ রয়েছে। ফলে নিয়োগকর্তার ব্যর্থতার কারণেও তারা সুযোগটি হারাতে পারেন।

বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, সাধারণ ক্ষমার জন্য নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর অনিবন্ধিত থাকা বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযানে নামবে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

কোভিড মহামারির পর ইরাক সরকার অনিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য করে। বাগদাদ, বসরা, কারবালা এবং নাজাফের অনেক নিয়োগকর্তা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কারখানায় কাজ করা বাংলাদেশিদের পক্ষে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের তুলনায় ইরাকে ভিসা নবায়নের শর্ত বেশ কঠিন স্বীকার করে দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, আমরা শর্ত মেনে ভিসা নবায়নের পরামর্শ দিচ্ছি। এ বিষয়ে প্রবাসীদের যেকোনো সহায়তার জন্য দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে। 

দূতাবাস সূত্র জানায়, সাধারণ ক্ষমা গ্রহণের বিষয়ে এখনো তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে অন্যান্য দেশের ‍তুলনায় বাংলাদেশিরা এগিয়ে। ভিসা নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর পরই প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা যায়।

আবু সালেহ ইরাক কর্তৃপক্ষের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রথম দুই সপ্তাহে প্রায় ২৫ হাজার বিদেশি তাদের ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি কতজন তা জানা যায়নি।

বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ৭৫ হাজার ৮৫১ জন বৈধভাবে ইরাকে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে অনুমান করা হয় যে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করাসহ সব মিলিয়ে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি এখন ইরাকে অবস্থান করছেন।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ