Apan Desh | আপন দেশ

গাজীপুরে রেললাইন কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন টুকু: সিটিটিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

গাজীপুরে রেললাইন কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন টুকু: সিটিটিসি

ছবি : সংগৃহীত

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর নির্দেশে গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইন কাটা হয়েছিল। 

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বলা হয়, নাশকতা করে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার এবং ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা করেছিলেন টুকু। তার নির্দেশে রেললাইন কাটের ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা মো. ইখতিয়ার রহমান কবির (৪৩)।

এর আগে শ্রীপুরে রেলের লাইন কেটে ওই নাশকতার ঘটনার মূলহোতা কবিরসহ লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইমন হোসেনকেও (১৯) গ্রেফতার করে সিটিটিসি।

সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিরা নাশকতার কথা স্বীকার করেছেন। ইখতিয়ার রহমান কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে টুকু বলেছিলেন দলীয় উচ্চ পর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে।’ 

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রাজধানীতে গাড়িতে ভাংঙচুর, আগুন দেয়া ও বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সাধারণ মানুষ রেলকে নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু ট্রেনে চলাচল করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে ও রেল চলাচল বিঘ্ন করতে নাশকতার পরিকল্পনা করে ছাত্রদল-যুবদল। পাশাপাশি নাশকতার মাধ্যমে রেলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটানোর উদ্দেশ্য ছিল।

তিনি বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুবদলের শীর্ষনেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কবির গাজীপুর ছাত্রদলের দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে।

তারা হলেন- গাজীপুরের আজিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা, গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়।তাদের বলা হয়, স্থান নির্বাচন করে নাশকতা সফল করার জন্য। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য তোহা ও মাসুম মিলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার বাসায় একটি মিটিং করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল রেললাইনের নাট-বল্টু খুলে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা। কিন্তু তারা নাট-বল্টু খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর বিষয়টি কবিরকে জানানো হয়। পরে কবির রেললাইন কাটার নির্দেশ দেয় পাশাপাশি রেল কাটার জন্য লোকবল দেয়ার কথা জানায়।

এ জন্য সে লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইমন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রথমে ইমনকে বড় লোহার পাত কাটা শেখার জন্য টাকা দেয়। ইমন লোহা কাটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয়ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা হয়। আর লোহা কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি ঢাকা থেকে কেনা হবে। কবির, ইমন, তোহা ও মাসুম মিলে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর মার্টেকের একটি দোকান থেকে সব যন্ত্রপাতি ১০ ডিসেম্বর কিনে ইমনের বাসায় রাখে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ ডিসেম্বর ইমনের বাসা থেকে যন্ত্রপাতি গাজীপুর নিয়ে যাওয়া হয়। একইদিন ইমন ও কবির কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে জয়দেবপুর রেলস্টেশনে যায়। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তোহা ও মাসুম চলাচলের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করা, গ্যাস সিলিন্ডার কেনাসহ সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এ সময় তারা ট্রেনের শিডিউল জেনে রাখে।

এরপর ১৩ তারিখ রাতে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খাওয়ার পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে রওনা দেয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে মোট নয় জন একত্রিত হয়ে রেললাইন কাটার কাজ শুরু করে। আগে থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া ইমন অন্যদের সহযোগিতায় রেললাইন কাটে। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কবির পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নের সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।

তিনি বলেন, এ নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করা, ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো এবং মানুষ যেন রেলে যাতায়াত না করে। এ লক্ষ্যে তারা রেললাইন কাটে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেলে যায়। অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা ঢাকায় চলে আসে। ভাড়া করা মাইক্রোবাস তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেটে নামিয়ে দেয়। পরবর্তীতে রেললাইন কাটার যন্ত্রপাতি ইমনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন <> ড. ইউনূসের মামলার রায় ১ জানুয়ারি

এ সময় কবির বেশ কিছু টাকা দেয় ইমনকে। পরবর্তীতে রেল কাটায় ব্যবহৃত মালামাল রেখে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। রেল কাটা সফল হয়েছে বলে কবির নির্দেশদাতা টুকুকে জানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে কবিরকেও বড় অংকের টাকা পাঠায় নির্দেশদাতা।

সিসিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেফতার কবির এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি সে জানিয়েছে গত ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, নিউ মার্কেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টিরও বেশি বাসে আগুন দিয়েছে।

এর আগে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় গান পাউডারসহ ছাত্রদল কর্মী গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদেও কবিরের নাম এসেছে। বিশেষ করে মহানগর দক্ষিণ এলাকায় যত নাশকতা ঘটেছে তার বেশিরভাগ ঘটনার মূল পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতা হিসেবে সে জড়িত বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ডেমরায় বাসে আগুনের ঘটনায় চালকের সহকারী নিহতের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে আমরা খুঁজতে ছিলাম। সব কটি ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কবিরকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে আনা হবে।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতার নির্দেশনা ছিল কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নির্দেশদাতা যুবদলের সভাপতি সালাউদ্দিন টুকু। টুকু তাকে ডেকে জানায়, উপর থেকে রেলে নাশকতার নির্দেশ আছে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কবিরকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে রেললাইন কাটার ঘটনা বাস্তবায়নে কৌশল নির্ধারণে কাউন্সিলর আজমলের বাসায় মিটিং করা হয়।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়