Apan Desh | আপন দেশ

তীব্র গরম মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১০:১৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

তীব্র গরম মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে

ফাইল ছবি

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করেন সবাই। বাতাসের আর্দ্রতাও অস্বস্তিকর এক বিষয়। এক গবেষণা বলছে, এই ধরনের পরিস্থিতি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। অধিক তাপমাত্রা মনকে প্রভাবিত করে। এমনকি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

জেএএমএ সাইকিয়াট্রি জার্নালে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দুই দশমিক দুই মিলিয়নেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মেডিক্যাল রেকর্ড যাচাই করা হয়। যারা ২০১০ এবং ২০১৯-এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে দুই হাজার সাতশ ৭৫টি কাউন্টি থেকে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন।

গবেষকরা দেখেন, গ্রীষ্মের দিনগুলোয় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য বছরের শীতল দিনগুলোর তুলনায় প্রায় আট শতাংশ বেশি মানুষ জরুরি বিভাগে গেছেন। আর জরুরি বিভাগে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে ছিল, উদ্বেগ, স্ট্রেস, খারাপ মেজাজ, সিজোফ্রেনিয়া, সেলফ-হার্ম ও বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার। এমন মানসিক সমস্যাগুলো তাপমাত্রার অনুপাতে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছিল।

গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে তাপদাহ, দাবানলের মতো আবহাওয়া-সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা বাড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাবও দিন দিন বাড়ছে।

নিক ওব্রাডোভিচ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের কম্পিউটেশনাল সোশ্যাল সায়েন্টিস্ট। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, অনেক ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যাচ্ছে। উত্তাপের চরম মাত্রার ফলে এমনটি হচ্ছে।
গবেষণায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে মানসিক অবসাদ, আগ্রাসন বাড়ার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। এমনকি আত্মহত্যার উচ্চ হারসহ বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার যোগসূত্র মিলেছে গবেষণায়।

ড. ওব্রাডোভিচ বলেন, চরম তাপমাত্রা মেজাজ থেকে শুরু করে তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা জাগায়।

২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এক দশমিক নয় মিলিয়ন আমেরিকানদের মধ্যে এক সমীক্ষা করে জানা যায়, যে দিনগুলিতে তাপমাত্রা ৫০ এবং ৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছিল তার তুলনায় যে দিনগুলিতে তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছিল, সে দিনগুলোয় কম আনন্দ এবং সুখ অনুভব করেছেন অনেকে। সেইসঙ্গে অধিক মানসিক চাপ, রাগ ও ক্লান্তি অনুভব করার মাত্রাও কম তাপমাত্রার দিনগুলোর থেকে বেশি ছিল। সমস্যাগুলো আরো তীব্র ছিল যখন তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রির উপরে ছিল।

ডালাসের ইউটি সাউথওয়েস্টার্ন মেডিক্যাল সেন্টারের ক্লিনিকাল নিউরোসাইকোলজিস্ট সি. মুনরো কুলাম বলেন, 'তাপের কারণে সৃষ্ট অস্বস্তি এবং শরীর ঠাণ্ডা হতে যে শক্তি খরচ হয় তা সামগ্রিক সহনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে। উত্তেজনা, জ্বালা এবং ব্যথা কম সহনীয় হয়ে ওঠতে শুরু করে তখন।'

লরিয়েট ইনস্টিটিউট ফর ব্রেন রিসার্চ অফ তুলসা, ওকলার সভাপতি এবং বৈজ্ঞানিক পরিচালক ডা. মার্টিন পলাস বলেন, দেহ একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত মানসিক চাপ নিতে অভ্যস্ত। তাপদাহের সময় যখন শরীর তার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, তখন মানসিকভাবে অতিরিক্ত চাপ যোগ হয়। এর ফলে স্ট্রেস ও প্রদাহ বাড়ে।
তীব্র তাপদাহের মধ্যে, নিজেকে সুরক্ষা করাও বেশ কঠিন। যাদের নিয়মিত বাইরে চলাফেরা করতে হয় তাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি জটিল।

তীব্র গরমে হাইড্রেটেড থাকার বিকল্প নেই। অতিরিক্ত তাপে আপনার শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। তার প্রভাব শারীরিক এবং মানসিক উভয়ক্ষেত্রেই প্রকটভাবে পড়বে। তাই প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ বিশেষ করে পানি পান করার চেষ্টা করুন। সাধ্যমতো তাপ এড়িয়ে চলুন। প্রখর রোদে প্রয়োজন ছাড়া চলাফেরা করবেন না। যদি করতেই হয় তবে ছায়া পাওয়ার ব্যবস্থা রাখুন। এ ক্ষেত্রে ছাতা ব্যবহার করাই উত্তম।
 

আপন দেশ ডটকম/আরইউ/তথ্যসূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়