Apan Desh | আপন দেশ

মহান মুক্তিযুদ্ধের নান্দনিক দলিল ‘বিরহ বিজয়’ 

শফিকুল কাদির 

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মহান মুক্তিযুদ্ধের নান্দনিক দলিল ‘বিরহ বিজয়’ 

ছবি: সংগৃহীত

শক্তিমান কথাশিল্পী ফাইজুস সালেহীনের বিরহবিজয় উপন্যাসটি পড়েছি একাধিকবার। মহান মুক্তিযুদ্ধে গ্রামবাংলার সর্বস্তরের মানুষের— নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীর সীমাহীন সংগ্রাম ও ত্যাগের অবিকল চিত্র ধরা পড়ে এ উপন্যাসের পাতায় পাতায়। প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার প্রায় সঙ্গ সঙ্গে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বইটির সপ্রশংস আলোচনা। জনপ্রিয় সব টিভি নাটকের স্বনামধন্য প্রযোজক আতিকুল হক চৌধুরী এ উপন্যাসকে মহান মুক্তিযুদ্ধের নান্দনিক দলিল হিসাবে আাখ্যায়িত করেন। 

যতদূর মনে পড়ে, দৈনিক সমকালে প্রকাশিত ওই আলোচনায় জনাব চৌধুরী লেখেন, এক নিঃশ্বাসে যখন বইটি পড়ছিলাম, তখন আমার মনে হয়েছিল, আমি যেন একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখছিলাম। ক্যামেরায় নয়, শুধু কলম দিয়েও যে একটি চলচ্চিত্রের আমেজ তৈরি করা যায়, ফাইজুস সালেহীনের বিরহ বিজয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

গবেষক ড. আমিনুর রহমান সুলতান বইটি পড়ে এতোটাই মুগ্ধ হন যে, তখনই তিনি বিরহ বিজয়ের ভূয়সী প্রশংসা করে রচনা করেন একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ, যা দৈনিক জনকণ্ঠের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয় তিন কিস্তিতে। প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘ইতিহাস যাদের কথা লিখে না’। তিনি উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র বিশ্লেষণ করেন সরস ভাষায়। দৈনিক সংবাদেও প্রকাশিত হয়, নাতিদীর্ঘ আলোচনা। সেখানে বলা হয়, বিরহ বিজয় উপন্যাসে দেশপ্রেম, সাহস, অনাবিল প্রেম ও বিরহের চিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

সত্যিকার অর্থেই বিরহ বিজয় উপন্যাসে খুঁজে পাওয়া যায় মহান মুক্তিযুদ্ধে গ্রামবাংলার মানুষের ত্যাগ, সংগ্রাম ও গেরিলা যুদ্ধের অবিকল ছবি। নূরুলদিন, শরাফ উদ্দিন, ইকবাল, মজিবুর মাস্টার, মকসুদ খলিফা, রেবেকা, শেফালী, করিম দারোগা, কাজেম আলী ডাক্তার, সুখিয়া গাড়িয়াল, শিলা, বিবিসি কালাম এ উপন্যাসের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও আলোচিত চরিত্র। প্রেম, বিরহ, সংগ্রাম ও যুদ্ধের নানান ঘটনার ধারাবাহিকতায় প্রতিটি চরিত্র হয়ে উঠে জীবন্ত। এ বই যখন পড়তে শুরু করেন তখন পাঠক কখনও কান্না বিগলিত হয়ে উঠেন, কখনও রোমাঞ্চিত। গ্রামের পরিবেশ- প্রতিবেশ, জল-জঙ্গল, নদী ও বিলের যে দৃশ্যকল্প তৈরি করা হয়েছে তা সেই সময়ের নিরেট বাস্তবতার প্রতিচিত্র।  

উপন্যাস উপন্যাসই। ইতিহাস নয়। তা সত্ত্বেও বিরহ বিজয় উপন্যাসে লেখক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে আলো ফেলেছেন বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাদপীঠে। লেখক চকিতে পাঠককে নিয়ে যান বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, উত্তাল ঊনসত্তরের দিনগুলোতে। ফকির মজনু শাহ ও নূরুলদিনের বিদ্রোহের ইতিহাসও উঁকি মারে এ উপন্যাসে। 

যথার্থই বলা হয়ে থাকে যে, বিরহ বিজয় ছোট কলেবরের এক বৃহৎ উপন্যাস। লেখক ফাইজুস সালেহীনের সাম্প্রতিক এক স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম যে, প্রকাশের পথে রয়েছে বইটির তৃতীয় সংস্করণ। বইঘর পাবলিশার্স প্রকাশ করছে তৃতীয় সংস্করণ। প্রচ্ছদও করা হয়েছে নতুন, যা সহজেই পাঠকের দৃষ্টি কাড়ে। 

এ উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীরা কথা বলে দক্ষিণ ময়মনসিংহের, বিশেষ করে গফরগাঁওয়ের কথ্য ভাষায়। কাহিনির প্রয়োজনে বেছে নেয়া হয়েছে গফরগাঁও, মুক্তাগাছা ও মধুপুরের মানুষের জীবনচিত্র। 

লেখক তার ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, তৃতীয় সংস্করণে যোগ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নতুন অধ্যায়, যা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা আগের সংস্করণ বিরহ বিজয় পড়েছি, তাদের আবারও পড়ার কারণ তৈরি হয়েছে এ সংযোজনের মধ্য দিয়ে। বিরহ বিজয় উপন্যাসের তৃতীয় সংস্করণটিও আশা করি পাঠকমহলে সমাদৃত হবে আগের মতোই।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়