Apan Desh | আপন দেশ

‘কারো গায়ে হাত তোলেনি’

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৩ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ০৯:৫৮, ১৩ মার্চ ২০২৪

‘কারো গায়ে হাত তোলেনি’

ছবি : সংগৃহীত

সোমালিয়ায় জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খান একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। জাহাজটির মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো ওই অডিও বার্তায় তিনি জলদস্যুদের আক্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, জলদস্যুদের আক্রমণে কেউ হতাহত না হলেও ভীতি ছড়াতে জলদস্যুরা জাহাজে উঠেই গুলাগুলি করেছে।

অডিও বার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, জাহাজটি গত রোববার (১০ মার্চ) মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল।

এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। নাবিকরা নিরাপদে আছেন। আমরা সব ধরনের প্রটোকল অনুসরণ করে নাবিকদের উদ্ধারে কাজ করছি।

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ থেকে পাঠানো অডিও বার্তায় বলা হয়, সময় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১.৩০)। ওই সময় একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। তখন ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল। তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি।

অডিও বার্তায় মো. আতিক উল্লাহ খান আরও বলেন, এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন চলে এল। এভাবে ১৫ থেকে ২০ জন এল জাহাজটিতে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল এল। ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। এখন ওই মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে দেবে। তবে সেটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এখন আমাদের থেকে ডিজেল নিচ্ছে। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন।

আরও পড়ুন <> বাংলাদেশি জাহাজ ভারত মহাসাগর জলদস্যুদের কবলে, জিম্মি ২৩

এর আগে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামের একটি বাংলাদেশি জাহাজকে দখলে নিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন।

কেএসআরএমের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা ১টার দিকে তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। জাহাজের বাংলাদেশি ক্রুরা সবাই ভালো আছেন বলেও জানান শাহরিয়ার জাহান। ঘটনাটি জানার পর নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।

জাহাজটিতে জিম্মি থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন- ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এবি মো. আনোয়ারুল হক, এবি মো. আসিফুর রহমান, এবি সাজ্জাদ হোসেন, ওএস জয় মাহমুদ, ওএস মো. নাজমুল হক, ওএস আইনুল হক, অয়েলার মোহাম্মদ শামসউদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস মো. নূর উদ্দিন ও ফিটার মো. সালেহ আহমেদ।

প্রসঙ্গত, ‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম হয় ‘এম ভি আবদুল্লাহ’। ২০১৬ সালে তৈরি ১৯০ মিটার লম্বা এই জাহাজটি গত বছর কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হয়। এরপর সাধারণ পণ্য পরিবহন করে আসছিল জাহাজটি।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং ২০০৪ সালে তাদের প্রথম জাহাজ কেনে। ‘এমভি ফাতেমা জাহান’ ছিল তাদের প্রথম জাহাজ। দেশে এখন নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৫২। এগুলোর মধ্যে ২৩টি কেএসআরএম গ্রুপের। আর এক দশকেই সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্রুপটি।

এরও আগে ২০১০ সালেও বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। দীর্ঘ তিন মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয়।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়