Apan Desh | আপন দেশ

শিবলীর পুন:নিয়োগ, বাজার পাচ্ছে বিনিয়োগকারীর মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৮ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ০২:১৭, ৯ এপ্রিল ২০২৪

শিবলীর পুন:নিয়োগ, বাজার পাচ্ছে বিনিয়োগকারীর মরদেহ

আপন দেশ। ফাইল ছবি

শেয়ার বাজার খ্যাত মতিঝিল। এখানে কান পাতলেই আওয়াজ আসে- গেলো, গেলো, সব শেষ হয়ে গেলো, দেখার কেউ নেই, রক্তক্ষরণের মতো অর্থক্ষরণ হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি আমাদের বাঁচান...। চারদিকে হাহাকার। কিন্তু কে শুনে কার কথা। কোটিপতি বিনিয়োগকারী এখন নিঃস্ব। শুধু নিজের জীবনই নয়; প্রজন্মের জন্যও যেন ঋণের বোঝা রেখে যাচ্ছেন। ফতুর অবস্থায় দিশা না পেয়ে প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারীও বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। 

ইতোমধ্যে রাজধানীতে নিজ হাতে ছেলের প্রাণ নিয়েছেন বিনিয়োগকারী বাবা। মেয়ের জানও কবজ করা হয়েছে; এমনটি ভেবে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন প্রকৌশলী মশিউর নামের বিনিয়োগকারী।

শেয়ার বাজারের মশিউরদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জীবন হননকারী, মানুষখেকোতে রূপ নিয়েছে এখনকার শেয়ার বাজার। আর এ অবস্থার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। 

সর্বশান্ত বিনিয়োগকারীকে আত্মহননের পথে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ না করা গেলেও বাজার পরিচালনায় যে, বর্তমান কমিশন ব্যর্থ এ কথা বলতে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। ব্যর্থতার দায়ে কর্মচ্যুত হয়, দোষের সাজা হয়, পদাবনতি ঘটে। শেয়ার বাজারের নিয়ন্তা সংস্থার সৌভাগ্যবান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। এতো কিছুর পরও তিনিই যেন বাজারের জন্য অপরিহার্য। একদিকে আত্মহত্যা করছেন বিনিয়োগকারী, অন্যদিকে পুরস্কৃত হচ্ছেন শিবলী রুবাইয়াত। পাচ্ছেন পুনঃনিয়োগ।     

১৯৯৬, ২০১০ সালে বাজার ধসের পর থেকেই চেয়ারম্যান আসে-যায়। কিন্তু বাজারের উন্নতি ঘটে না। অনেক আশায় ২০২০ সালের ১৭ মে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের হাতে দেয়া হয় শেয়ার বাজারের লাগাম। বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাজারের তেমন উন্নয়ন হয়নি। শেয়ার বাজারের উন্নয়ন না হলেও নিজের পদ পদবী ঠিকই বাড়িয়েছেন তিনি। 

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনালের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২২ সালে তিনি এ দায়িত্ব পান; যা এ বছরেই (২০২৪) শেষ হবে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা ভালো নেই। অর্থকষ্টের কারণে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে ঈদের খরচ মেটাচ্ছেন। আর যারা তাও পাচ্ছেন না তারা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতিতে ৭ এপ্রিল ঘটলো জোড়া হত্যার ঘটনা।

আরও পড়ুন>> শেয়ার বাজারে আসন্ন ভয়ঙ্কর ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে শেয়ার বাজার। এ অবস্থার অন্যতম কারণ নিম্নমানের কোম্পানির বাজারে তালিকাভুক্তিকরণ। গত চার বছরে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি নিম্নমানের। এজন্য প্রথম এবং প্রধান দায়ী কমিশন। কমিশনই কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন নিঃস্ব। এছাড়াও কমিশনের ঘন ঘন পলিসি পরিবর্তনের কারণেও বাজারের আজ দৈন্যদশা।

জানা গেছে, আত্মহননকারী মশিউর একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে চাকরি ছেড়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এছাড়া চার-পাঁচ বছর আগে দক্ষিণখান এলাকায় ১৪ লাখ টাকায় চার শতক জমি কিনে তিনি প্রতারিত হন। জমির দলিল ছিল জাল। শেয়ার বাজারে ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েন তিনি। সংসারের খরচ মেটাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার স্ত্রী মজিদা খাতুন কিছু শিক্ষার্থীকে বাসায়ে গিয়ে পড়ালেও সংসারের দৈন্যদশা কাটছিল না।

মশিউরের স্ত্রী মজিদা খাতুন বলেন, দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে সংসারের ব্যয় বহন করা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। আমি প্রাইভেট পড়িয়ে ৮ হাজার টাকা আয় করি এবং তা সংসারে ব্যয় করি। এতেও সচ্ছলতা ফেরেনি। এসব কারণে আমার স্বামী কিছুদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। হতাশা থেকেই হয়তো ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সিনথিয়া অচেতন হয়ে পড়ায় তিনি হয়তো ভেবেছিলেন মেয়ে মারা গেছে।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি আব্দুল আহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মশিউর আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। ওই বছরের ২৭ জুলাই ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ডিএসই প্রধান সূচক-ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ১৪৫ পয়েন্ট। প্রায় চার বছর পর আজ (৮ এপ্রিল) ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪১৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শতাংশের হিসেবে কমেছে ৫ শতাংশ। আজ সূচক হয়েছে ৫ হাজার ৮৬০ পয়েন্ট।

বাজার সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন ২০২৪ সালে লেনদেন দাঁড়াবে কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা। আর সূচক হবে ১০ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি। কিসের ভিত্তিতে শিবলী রুবাইয়াত পুনঃনিয়োগ পাচ্ছেন তা এখনও ধোয়াশাই থেকে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনে।

আপন দেশ/টি/এবি/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়