Apan Desh | আপন দেশ

সরকারি বরাদ্দের সিকি ভাগও পায় না মাদারীপুরের বানর

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ০০:৩৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সরকারি বরাদ্দের সিকি ভাগও পায় না মাদারীপুরের বানর

ছবি: সংগৃহীত

গহিন অরণ্যে ঢাকা ছিল মাদারীপুর সদরের চরমুগরিয়া এলাকা। ছিল বানরের অভয়ারণ্য। মানুষের বসতি তেমন একটা ছিল না। প্রাকৃতিক পরিবেশে দলবেঁধে থাকত বানর।

বনের গাছে গাছে ঝুলে বেড়াত আর বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খেয়েই বেঁচে থাকত। কালের আবর্তে গড়ে উঠেছে বসতি। চার যুগের ব্যবধানে কমে গেছে বানরের প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস্য। ফলে বানরের বেঁচে থাকা এখন চরম হুমকির মুখে।

স্থানীয়রা বলছেন, গত ১০ বছরে বানরের সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে। তীব্র খাদ্য সংকটের কারণেই চরমুগরিয়া ছেড়ে যাচ্ছে বানর।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের কর্মীদের অভিযোগ, সরকারিভাবে বানরের জন্য যে খাদ্য বরাদ্দ করা হয় তার অনেকাংশ মানুষের পেটে চলে যায়। তারা দাবি করেছেন, সরকারিভাবে আরো বেশি খাদ্য বরাদ্দ ও সঠিকভাবে খাওয়াতে না পারলে কয়েক বছর পর মাদারীপুরে বানর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মাদারীপুর বন ও পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের চরমুগরিয়ায় এখনো আড়াই হাজারের মতো বানর রয়েছে। এসব বানরের জন্য ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা খরচে বছরে ১৪৪ দিন খাবার বিতরণ করা হয়। প্রতিবার ২৪৫ কেজি করে খাবার দেয়ার কথা রয়েছে। যার মধ্যে ১২০ কেজি সাগর অথবা দেশী সবরি কলা, ১০০ কেজি পাউরুটি ও ২৫ কেজি চীনা বাদাম। এসব খাবার বিতরণ করার জন্য মাদারীপুর বন বিভাগের সঙ্গে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামির এন্টারপ্রাইজের মধ্যে চুক্তি রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বানরের খাওয়ানোর জন্য প্রতি সপ্তাহের  রোববার, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার এ তিনদিন চরমুগরিয়া এলাকার পিটিআই গেট, নতুন ব্রিজের গোড়া, পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন নদীর পাড়ে, লস্কর মার্কেটের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে, চরমুগরিয়া মিল গেট, বশীর স’মিল, কলেজ চত্বর, গরুর হাট, মধ্য খাগদী লুৎফর শরীফের বাড়ির পাশেসহ নয়টি স্পটে ঠিক করেছে।

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, মাঝে মাঝে দু-একবার বন বিভাগের লোকজনকে কিছু খাবার এনে বানরদের খাওয়াতে দেখেন তারা। আর যে পরিমাণ খাবার নিয়ে আসেন তা খুবই অপ্রতুল। সরকারিভাবে বানরের জন্য যে খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে, তার সিকি ভাগও খাওয়ানো হয় না।

চরমুগরিয়ার মধ্য খাগদী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা আবুল কালাম ফকির বলেন, ১০ বছর আগেও এখানে যত বান্দর ছিল তার অর্ধেকও এখন চোখে দেহি না। আর মাঝে মাঝে দুই একজন লোক হাতে করে কিছু কলা রুটি এনে বান্দরগো খাওয়ানোর জন্য ছিডাইয়া রাহে। বান্দরে ওই খাবার সবসময় খায় না। বান্দরের খাবার নিয়া পুরা বাঁদরামি চলে।’

চরমুগরিয়ায় খাদ্য সংকটে বানরের টিকে থাকাই এখন ঝুঁকির ভেতরে রয়েছে উল্লেখ করে মাদারীপুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের সমন্বয়কারী অজয় কুণ্ডু বলেন, সরকারিভাবে বছরে ১৪৪ দিনের কাগজে-কলমে বানরকে খাওয়ালেই হবে না। এ প্রাণিকুল টিকিয়ে রাখতে প্রতিদিনই সরকারিভাবে খাবার বিতরণ করা প্রয়োজন। খাদ্য সংকটের কারণে বানরগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

বানরগুলোকে সঠিকভাবে খাবার না দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ভারপ্রাপ্ত বন ও পরিবেশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা চরমুগরিয়ার নয়টি স্থানে সপ্তাহে তিনদিন ঠিকাদারের লোকজন সঙ্গে নিয়ে বানরের খাবার বিতরণ করি। কিন্তু এ খাবার হয়তো বানরের জন্য পর্যাপ্ত নয়। প্রতিদিন বানরগুলোর জন্য যাতে খাবার বিতরণ করতে পারি সে ধরনের একটি পরিকল্পনা করেছি। বরাদ্দ পেলে বানরগুলোকে সারা বছরই পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হবে। বন্যপ্রাণী দেশের সম্পদ। এদের টিকিয়ে রাখতে আমাদের কোনো অবহেলা নেই।

আপন দেশ/এবি/ তথ্যসূত্র: বণিকবার্তা

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়