Apan Desh | আপন দেশ

ছারপোকা তেলাপোকায় আক্রান্ত রংপুর মেডিকেল!

রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ৩০ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৫:৪৯, ৩০ মার্চ ২০২৪

ছারপোকা তেলাপোকায় আক্রান্ত রংপুর মেডিকেল!

ছবি: সংগৃহীত

দেশের উত্তরাঞ্চলের উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। ছারপোকা ও তেলাপোকার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে পুরো মেডিকেল। কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) বিভাগের ওয়ার্ড, মেডিসিন বিভাগ, সিসিইউ এর অন্যতম। পোকার আক্রমণে দিশেহারা চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। সেই সঙ্গে বাথরুমের অবস্থা করুণ। নিয়মিত পরিস্কার না করায় মানুষের ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে সবসময় দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ভর্তি থাকা হৃদরোগীদের সার্বক্ষণিক ছারপোকার কামড় আর তেলাপোকার অত্যাচার সহ্য করে চিকিৎসা নিতে হয়। রোগীর স্বজন ও রোগীদের অভিযোগ, পুরো ওয়ার্ডজুড়ে তেলাপোকা ছাড়া পোকার বাস। অগণিত ছাড়পোকা ও তেলাপোকা বাসা বেঁধেছে। রোগীদের শরীরের ওপর দিয়ে চলাচল করে পোকাগুলো, খাওয়ার থালায়, পানির গ্লাসে, বোতলে সর্বত্র এদের অবাধ বিচরণ। ছাড়পোকার কামড় সহ্য করে থাকাই মুশকিল।

হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কুড়িগ্রামের রোগী সালাম মিয়ার ছেলে বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, বাবার অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। দু’দিন ধরে তার জ্ঞান নেই। এমন অবস্থায় তার শরীরে মুখের ওপর দিয়ে তেলাপোকা আর ছারপোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খোদ কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে বার বার জানানোর পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। মশার উৎপাত মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। বাথরুম নিয়ম অনুযায়ী পরিস্কার না করায় ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোরশেদ বলেন, আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত সাত দিন আগে কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এখানে ছাড়পোকা ও তেলাপোকার আক্রমণে আমরা অতিষ্ঠ। খাবার প্লেটে বাবার শরীরের পোকা পায়চারি করছে। রাতে বাবা ঘুমাতে পারেন না ছাড়পোকার কামড় ও মশার উৎপাতে। ওয়ার্ডের বাথরুমগুলো সময় মতো পরিষ্কার না করায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে ধারে কাছে যাওয়া যায় না। এমন অবস্থা গোটা মেডিকেলের ওয়ার্ডগুলোর।

দিনাজপুরের জীবন আহমেদ অভি বলেন, রোগী নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে মেডিসিন বিভাগে আছি। ছারপোকা তেলাপোকার অত্যাচার তো আছেই। রোগীকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। নোংরা, দুর্গন্ধ আর পিচ্ছিল হওয়ায় অনেকেই পড়ে যাচ্ছেন। রোগীকে হাসপাতালে এনে স্বজনরাই রোগী হচ্ছেন। একটা সরকারি হাসপাতালে এতটা অব্যবস্থাপনা রংপুর মেডিকেল না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।

আরও পড়ুন>> হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ!

নীলফামারীর জলঢাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মোনাব্বর মিয়া (৭৫) বলেন, গত ১৪ দিন ধরে হৃদরোগ কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছি। রাতে ছাড়পোকা ও তেলাপোকার অত্যাচারে ঘুম হয় না। এ ওয়ার্ডে বাথরুমের বেহাল দশার কারণে নাক-মুখ কাপড়ে পেচিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের মানুষ মনে করে না।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. হরিপদ সরকার যোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান কার্ডিওলজি বিভাগ (হৃদরোগ) বলেন, মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগ (কার্ডিওলজি) তেলাপোকা ও ছাড়পোকার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বাথরুমের সমস্যা মশার উপদ্রবের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে সবসময় দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুছ আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, মেডিকেলে ছারপোকা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীরা তাদের ব্যবহৃত কাপড়ে বহন করে আনছে। আমরা নিয়মিত স্প্রে করে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। নিয়মিতই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো হয়। তবে রোগী বেশি ভর্তি হবার কারণে কিছুটা বিলম্বের ঘটনা ঘটে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়