Apan Desh | আপন দেশ

সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড়ে নিহত ১০

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ৭ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৯:০৫, ৭ এপ্রিল ২০২৪

সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড়ে নিহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা ভেঙে ও বজ্রপাতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলাতেই সাত জন মারা গেছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে এসব ঘটনা ঘটে। 

ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা। রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে অন্ধকার নেমে আসে, শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়।

এ সময় সদর উপজেলার মরিচাল এলাকায় তীব্র বাতাসে বড় গাছ ভেঙে পড়ে ইউপি সদস্য হারুন শেখের বাড়ির ওপর। ফলে দুইতলা টিনের বাড়ি মাঝ বরাবর ধসে যায়। এতে গাছচাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন রুবি বেগম (২৫)। এ ঘটনায় আরও দুইজন আহত হয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, সকালে ঝড়ে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলায় শত শত গাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়ে, তাতে অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, হঠাৎ ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এতে সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া একজন নিহত হয়েছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা ( ১১)। রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত হেলেনা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে। মিনারা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট গ্রামে ও মাহিয়া আক্তার ঈশানার বাড়ি পোনাবালিয়া গ্রামে।

নিহতদের মধ্যে হেলেনা বেগম ও মিনারা বেগম গৃহিণী, মাহিয়া আক্তার ঈশানা আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে মাঠ থেকে গবাদি পশু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

পটুয়াখালীর বাউফলে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ঝড়ের কবলে পরে তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে দুইজন নিখোঁজ হন। এছাড়া বজ্রপাতে মারা গেছে অন্তত ১০টি গরু।

বাউফল থানার ওসি সোনিত কুমার গাইন জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় পুরো এলাকা রাতের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি, সেই সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত।

ঝড়ের সময় নজিরপুর ইউনিয়নের জহির সিকদারের কিশোর ছেলে মোহাম্মদ রাতুল শিকদার (১৫) বজ্রপাতে মারা যায়। দাসপাড়া ইউনিয়নের চর আলগি এলাকার বৃদ্ধ সাফিয়া বেগম (৮০) গাছচাপা পড়ে মারা যান।

ওসি আরও জানান, তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন- মান্নান ফরাজীর ছেলে ইব্রাহিম ফরাজী (৪৩) ও মনু রাঢ়ীর ছেলে ইসমাইল রাঢ়ী (৪০)।

নিখোঁজ দু’জনই চন্দ্রদীপ ইউনিয়নের চর ওয়াডেলের বাসিন্দা ও পেশায় জেলে।

ওসি সোনিত কুমার গাইন জানান, ঝড়ে কেশবপুর ইউনিয়নে ২টি, ধুলিয়ায় ৩টিসহ অন্তত ১০টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মোহাম্মদ জসীম জানান, সদর থানার আউলিয়াপুরে বজ্রপাতে একটি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা দূর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা সুনাম দেবনাথ জানান, জেলায় ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

ভোলার ঝড়ে ঘরচাপা পড়ে ও বজ্রপাতে দুই জন নিহত হয়েছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- হারেস (৬৮) এবং বাচ্চু (৪০)। এদের মধ্যে হারেস ঘরচাপায় এবং বাচ্চু বজ্রপাতে নিহত হন।

তাদের বাড়ি উপজেলার বদরপুর ও চরভূতা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়াও ঝড়ে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলার লালমোহন, তজুমদ্দিন এবং মনপুরা উপজেলায়ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, নিহতের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ৩ উপজেলায় ১৬ মেট্রিক টন চাল তাৎক্ষণিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঝড়ে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান জেলা প্রসাশক।

নেত্রকোনায় খালিয়াজুরিতে হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপেজলার রাজঘাট হাওরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কৃষক ৫২ বছর বয়সী শহীদ মিয়া উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে।

নিহতের ভাই রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ ক্ষেতে কাজ করছিলেন শহীদ মিয়া। বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান শহীদ মিয়া।

খালিয়াজুরী থানার ওসি উত্তম কুমার সাহা জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহত শহীদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে অন্তত দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঝড়ে গাছ ও বিলবোর্ড পড়ে ১০ জন আহত হয়েছেন।

ঝড়ের সময় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কচুয়া উপজেলার চরসোনাকুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম লিকচান (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রোববার (৭এপ্রিল) সকাল ৯টা ৪০ থেকে ১০ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়-বৃষ্টিতে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়।

স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে আকাশ। সকালেই যেন রাত নেমে আসে। এর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টি। এতে বাগেরহাট সদর উপজেলার পুটিমারি, রাধাবল্লভ, গবরদিয়য়, ডেমা, বাশবাড়িয়া, শহরতলীর মারিয়া পল্লী ও কচুয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এছাড়া বাগেরহাট টার্মিনাল এলাকায় ঝড়ে বিলবোর্ড পড়ে একটি বাস ও ৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুইজন বাস শ্রমিক আহত হয়েছেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, আকস্মিক ঝড়ে বেশকিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়