Apan Desh | আপন দেশ

‘একজগ পানি তুলতেই ১০ মিনিট লাগছে’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘একজগ পানি তুলতেই ১০ মিনিট লাগছে’

ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় চলছে খাবার পানির চরম সঙ্কট। নলকূপ ও মোটর পাম্পে উঠছে না পানি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বলছে, পানির স্তর নিচে নামার কারণে হ্যান্ড টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। এ উপজেলায় প্রায় ২৪ থেকে ২৫ ফুট নিচে নেমেছে পানির স্তর। ফরে নলকূপ ও পাম্পে মিলছে না পানি। পানির প্রয়োজন মিটাতে সাবমারসিবল মেশিনই শেষ ভরসা। তা কিনতে প্রতিদিন দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে জুনিয়াদহ ইউনিয়নের মির্জপুর গ্রামে দেখা যায়, অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অনেকে টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর বসিয়েছেন। তবে সেখানেও পানির দেখা মিলছে না। উপজেলার মোকারিমপুর, বাহিরচর, বাহাদুরপুর ও চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের পরিস্থিতি একই। টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পানির সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম।

মির্জপুর গ্রামের শাবানা খাতুন বলেন, গত দেড় মাস ধরে পানির সমস্যা। একমাস আগে টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর বসিয়েছি, তাতেও পানি আসছে না। খাবার পানির জন্য এখন দূরের একটি মাঠের শ্যালো মেশিন থেকে পানি আনতে হচ্ছে।

চরদামুকদিয়া রশিদা বেগম বলেন, একজগ পানি তুলতে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় লাগছে। পানির সমস্যার কারণে সাবমারসিবল বসাতে ৪৫ হাজার টাকা জোগার করতে গরু-ছাগল বিক্রি করে দিয়েছি। আশপাশের পুকুর ও খালেও পানি নেই। খুব কষ্টে আছি।

পৌর এলাকা ফারাকপুর গ্রামের গৃহবধূ শামিমা আক্তার বলেন, আগে ২০-৩০ মিনিট মোটর চালালেই ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেত। ১৫-২০ দিন ধরে দুই-তিন ঘণ্টা মোটর চালালেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। এভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেকের বৈদ্যুতিক মোটর।

সাবমারসিবল মোটর মেশিন ব্যবসায়ী লালন মিয়া জানান, গত সাতদিনে উপজেলায় প্রায় ১২০০ সাবমারসিবল পাম্প বিক্রি ও বসানো হয়েছে। গত মার্চ মাস থেকেই পানি ওঠা কমে যায়। আর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে এ সমস্যা তীব্র হতে শুরু করেছে। সামর্থ্যবানরা বাড়িতে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে সাবমারসিবল পাম্প বসাচ্ছেন।

আরও পড়ুন>> বোরকা-নেকাব নিষিদ্ধ করল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল

ভেড়ামারায় উপজেলা সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় শতকরা প্রায় ৯৬ জন টিউবওয়েলের পানি পান করেন। কিন্তু প্রায় ২০ হাজার টিউবওয়েলের বেশির ভাগেই মিলছে না পানি। পৌর এলাকার পানির স্তর নেমেছে ২৭ ফুট, বাহাদুরপুরে, ৩৪ ফুট, মোকারিমপুরে ২৮ ফুট, চাঁদগ্রাম ও বাহিরচর ইউনিয়নে ৩০ থেকে ৩৪ ফুট।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ৩ লাখ নলকূপ রয়েছে। এরমধ্যে সরকারিভাবে পূর্বের ৩১১০টি এবং নতুনভাবে ১৫৬টি নলকূপ বসানো হয়েছে। তারমধ্যে চালু রয়েছে দুই হাজার ৩১৯টি। অকেজো হয়ে আছে ৪৫০টি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত পানির স্তর ২২ থেকে ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেলে নলকূপে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বছর উপজেলায় পানির স্তর নেমেছে ২৪ থেকে ২৫ ফুটে। ফলে অধিকাংশ টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না। গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়