Apan Desh | আপন দেশ

বরিশালে হঠাৎ করে নদীতে এতো পাঙ্গাস এলো কোথা থেকে?

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৫ নভেম্বর ২০২২

বরিশালে হঠাৎ করে নদীতে এতো পাঙ্গাস এলো কোথা থেকে?

ছবি-সংগৃহীত

ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনার বেশ কিছু এলাকার নদীতে হঠাৎ করেই বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, গত ছয় দিনে যত পাঙ্গাস ধরা পড়েছে তেমনটি সাধারণত দেখা যায় না।

সুস্বাদু এই মাছটি দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। দ্রুত বর্ধনশীল ক্যাটফিশ প্রজাতির এ মাছটির একটি সর্বোচ্চ ৬০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

বরিশালের মাছের আড়তদার জহির সিকদার বলছেন, ২৯শে অক্টোবর থেকে শুরু করে তিনদিনে প্রায় সাড়ে ছয়শ মণ পাঙ্গাস বরিশালের আড়তগুলোতে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, “সাধারণত শীতের শুরু ও আর শেষের দিকে নদীতে পাঙ্গাস ধরা পড়ে। কিন্তু এতো পাঙ্গাস এভাবে কখনো আসতে দেখিনি। বিশেষ করে উনত্রিশ তারিখেই প্রায় তিনশ মণ পাঙ্গাস এসেছে বরিশালের আড়তে”।

ওয়ার্ল্ডফিশের বিজ্ঞানী ডঃ হেদায়েত উল্লাহ বলছেন, নদীতে এক সময় পাঙ্গাস মাছ প্রচুর ধরা পড়লেও একসময় এটি খুবই কমে গিয়েছিলো। যদিও সরকারি ও বেসরকারি নানা পদক্ষেপের কারণে গত ৬/৭ বছর ধরে নদীতে আবার পাঙ্গাসের দেখা মিলছে।

সাধারণত নদী, বিল বা বন্যার পানি জমে এমন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা পাঙ্গাস পাওয়া যায়। যদিও বাংলাদেশের বাজারে নদীর পাঙ্গাসের তুলনায় চাষ করা পাঙ্গাসই বেশি ও অনেক সস্তা দামে পাওয়া যায়। একটি ১০/১২ কেজি ওজনের নদীর পাঙ্গাস মাছ যেখানে ৮০০-১০০০ টাকার মতো প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়, সেখানে চাষের মাছের কেজি ওজনভেদে ১৫০-২৫০ টাকার মতো দরে বিক্রি হয়।

সরকারের হিসেব অনুযায়ী ২০১৫-১৬ সালে নদীর পাঙ্গাস ধরা হয়েছিলো ৩৬১ মেট্রিক টন এবং এরপর থেকে ক্রমাগত বেড়েছে।

সর্বশেষ ২০২০-২১ সালে ৯২৬ মেট্রিক টন পাঙ্গাস পাওয়া গিয়েছিলো নদীতে।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য কেন্দ্রও দেশের অন্যতম বড় মাছের যোগানদাতা। সেখানকার আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জমাদ্দার বলছেন বরিশালের মতো না হলেও সেখানে গত কয়েকদিন পাঙ্গাস বেশ ধরা পড়ছে।

তবে বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলছেন, এই মৌসুমে ওই অঞ্চলে কত পাঙ্গাস ধরা পড়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো তাদের হাতে আসেনি।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন আড়ত ও মৎস্য অবতরণগুলো থেকে বলা হচ্ছে যে নদীর পাঙ্গাস এবার অনেক ধরা পড়েছে। তবে সংখ্যা বা পরিমাণ জানতে আমাদের আরও সময় লাগবে। এখনো যা তথ্য আছে তাদের আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ পাঙ্গাস মাছ গত কয়েকদিনে ধরা পড়েছে”।

একই ধরণের কথা বলেছেন ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল্যাহ। তিনি জানান, জেলার মৎস্য কেন্দ্রগুলো থেকে পাঙ্গাস বেশি ধরা পড়ার তথ্য আসলেও পরিমাণ বা বিস্তারিত তথ্য আসতে আরও সময় লাগবে।

পাঙ্গাস মাছ সম্পর্কিত তথ্য সরকারের মৎস্য বিভাগ সাধারণত বছরে একবার দিয়ে থাকে। আর দেশের মৎস্য আইন অনুসারে ১২ ইঞ্চির নীচে (৩০ সেন্টিমিটার) পাঙ্গাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

মৎস্য কর্মকর্তা, আড়তদার ও গবেষকদের মধ্যে চাঁই দিয়ে মাছ ধরা ও বেহুন্দি জাল ব্যবহার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারায় নদীতে পাঙ্গাস মাছের বড় হবার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এবার ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় দু মাস নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিলো। বছরে দুবার এভাবে মাছ ধরা এখন বন্ধ থাকে। ফলে এ সময়ে পাঙ্গাস মাছও অবাধ বিচরণের সুযোগ পায়। আবার প্রজনন মৌসুমের পর ইলিশের পোনায় ভরে যায় বেশ কিছু এলাকা। আর ইলিশের পোনা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে পাঙ্গাস মাছ।

“ইলিশ মাছ প্রজনন মৌসুমে ধরা বন্ধ করায় ইলিশ যেমন বাড়ছে, তেমনি আবার এর কারণে নদীতে পাঙ্গাসও বাড়ছে। এ কারণে এবার বেশ বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস পাচ্ছে জেলেরা,” বলছিলেন ডঃ হেদায়েত উল্লাহ।

তার মতে ইলিশের জন্য ৫টি অভয়ারণ্য আছে ওই অঞ্চলে। আবার ইলিশের যে প্রজনন মৌসুমের পাঙ্গাসও তখন ডিম ছাড়ে কিংবা ছোটো পাঙ্গাসগুলো ইলিশের পোনা খেয়ে থাকে।

ফলে ইলিশের জন্য যে উদ্যোগ সেটি পাঙ্গাসসহ কয়েকটি মাছের জন্য কাজে লেগেছে । এছাড়া দু মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকার ফলে উৎপাদন বাড়ে। আবার এ সময় পাঙ্গাস নদীতে বিচরণ করতে থাকে।

“নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর প্রথম ১০/১৫ দিন এটা বেশি দেখা যায়। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগও আছে পাঙ্গাস নিয়ে। এর ইতিবাচক প্রভাব হিসেবেও নদীতে পাঙ্গাস বাড়ছে,” বলছিলেন বিজ্ঞানী ডঃ হেদায়েত উল্লাহ।

বরিশাল অঞ্চলের তেঁতুলিয়া, বিশখালী, আন্ধারমানিক, মেঘনা ও পদ্মা মেঘনার সংযোগস্থলই মূলত দেশীয় পাঙ্গাসের পোনার অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র।

তবে বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের মাধ্যমে নির্বিচারে পাঙ্গাসের পোনা ধরাসহ বিভিন্ন কারণে নদী থেকে একসময় এ মাছটিই হারিয়ে যাচ্ছিলো। কারণ নদীতে জেলেরা বড় বড় চাঁই পেতে এক ধরনের খাবার দিত যাতে অসংখ্য পাঙ্গাসের পোনা আটকা পড়তো।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলছেন, কয়েক বছরের চেষ্টায় চাঁই আর বেহুন্দি জালের ব্যবহার পটুয়াখালীতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভোলাতেও এগুলো নিয়ে বেশ ভালো কাজ হয়েছে। ফলে ছোটো পাঙ্গাসগুলো নদীতে বড় হবার সুযোগ পাচ্ছে। আবার ইলিশ অভিযানের কারণে প্রচুর ইলিশ পোনা নদীতে বিচরণ করায় পাঙ্গাস পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। নদীতে বড় সাইজের এত পাঙ্গাস পাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলোই প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

সূত্র- বিবিসি বাংলা


আপন দেশ ডটকম/ এমএবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়