Apan Desh | আপন দেশ

নজরুল প্রয়াণ দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৭ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১০:৩৭, ২৭ আগস্ট ২০২৩

নজরুল প্রয়াণ দিবস আজ

ফাইল ছবি

বিদ্রোহ ও প্রেমের কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সাম্য ও মানবতার কবি নজরুল ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। শ্রমজীবী গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। আক্ষরিক অর্থেই তার এক হাতে ছিল প্রেমের বাঁশরী, ‘আর হাতে’ বিদ্রোহের তূর্য। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ। সাহিত্যজগতে তার আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। প্রস্থানও অনেকটা তাই।

খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারে নজরুলের মৃত্যুর দিনটি ছিল ২৯ আগস্ট ১৯৭৬। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মানুষ আজ স্মরণ করবে তাদের প্রিয় কবিকে।

নজরুল যখন লিখতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ তখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ও খ্যাতির শীর্ষে। রবীন্দ্রনাথের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে নজরুল সৃষ্টি করেন নিজের প্রভাববলয়। তার সাহিত্যকর্ম ছিল রবীন্দ্র-প্রভাবমুক্ত। একই সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন নতুন ধারার সাহিত্যের পথিকৃৎ। তার সেই নিজস্ব স্বর ও সুর আজও বহমান।

‘যত সব বন্দী-শালায়/আগুন জ্বালা/আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি’ বলা ‘ভাঙার গানে’র নজরুলের জীবন মোটেও মসৃণ ছিল না। লেখার জন্য জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে তাকে।

১৯২১ সালের ডিসেম্বরে কবি লেখেন ‘ভাঙার গান’ ও ‘বিদ্রোহী’। এরই মধ্যে শত বছর পার করেছে তার এই দুই অমর সৃষ্টি। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রকরণগত বৈচিত্র্য, অভিনবত্ব ও স্বাতন্ত্র্য তার কাব্যসাহিত্যকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ‘ভাঙার গান’ ও ‘বিদ্রোহী’ বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে বদলে দিয়েছে। ভাব-ভাষা-ছন্দে অভিনব ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পেয়েছে অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা। আজও পাঠক-গবেষকদের কাছে কবিতাটি সমান সমাদৃত। বাংলা কাব্যসাহিত্যে কবিতাটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। অনেক সমালোচক বলেছেন, এটি বিংশ শতাব্দীর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর অন্যতম।

সাংবাদিকতা ও পত্রপত্রিকা সম্পাদনা নজরুলের কর্মজীবনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯২০ থেকে ১৯৪২, অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত নজরুল সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’, দৈনিক ‘মোহাম্মদী’, দৈনিক ‘সেবক’, অর্ধসাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’, সাপ্তাহিক ‘লাঙ্গল’, সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’, সাপ্তাহিক মাসিক ‘সওগাত’ ও দৈনিক ‘নবযুগ’ (নবপর্যায়) পত্রিকার সঙ্গে কখনো সাংবাদিকতা সূত্রে, কখনো স্বত্বাধিকারী, আবার কখনো সম্পাদক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

১৯৪২ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৩৪ বছর কবি নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে সপরিবারে কবিকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবিকে ১৯৭৪ সালে এক বিশেষ সমাবর্তনে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে নজরুলকে নাগরিকত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার। ওই বছর একুশে ফেব্রুয়ারি তাকে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়। নজরুলের লেখা ‘চল চল চল’ গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে ফলপ্রসূ। তাই তিনিই রবীন্দ্রোত্তর সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। সে কারণে ইংরেজ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দিয়েছে। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা ৪০ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। 

কর্মসূচি : জাতীয় কবির ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ও ফাতিহা পাঠের আয়োজন করে। পরে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা। এতে স্মারক বত্তৃদ্ধতা দেবেন নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
সকাল ৮টায় জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলা একাডেমি। সকাল ১১টায় একাডেমির অবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নজরুল বিষয়ে একক বত্তৃদ্ধতা দেবেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ