Apan Desh | আপন দেশ

মায়াজালে বন্দি মায়াপথিক

আলমগীর খোরশেদ

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

মায়াজালে বন্দি মায়াপথিক

ফাইল ছবি

সাধারণ মানুষের দৃষ্টি যেখানে শেষ, কবিদের দৃষ্টি সেখানে খোঁজে পায় অদৃশ্য জীবন-তথ্য। অন্যরা সরাসরি ‘তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটা যেভাবে বলে, কবি সেটাকে বাক্য অলংকার দিয়ে শব্দের চিন্ময় গাঁথুনি এনে গড়ে তুলতে পারেন ছন্দের মহল। অমিয় পদাবলি।

জীবন মানে মায়া, না-দেখা একটা আয়োনিক বন্ধন, বিনি সুতোর মালায় জড়িয়ে লেপ্টে থাকা। সেই মায়ার মোহাবিষ্ট থেকে কবিরা বেরিয়ে আসতে পারেন না, যেমনটি পারেননি ‘মায়াপথিক’ কাব্যগ্রন্থের কবি রায়হান উল্লাহ।

মানুষের বেঁচে থাকা মানে একাকী পথচলা, পথের ঘ্রাণ যে পায়, জীবনের নিঃশ্বাস যে অনুভব করে, মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে তখন সে হয়ে উঠে মায়াপথিক। জীবনকে ধারণ করে মানুষ সময় ও প্রয়োজনে পথ চলে। হয়তো হোঁচট খায়, হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়, আবার দাঁড়ায়, পথচলে অসীমের পথে। রায়হান উল্লাহ তার মায়াপথিক কবিতায় এভাবেই তার দর্শনকে তোলে ধরেছেন।

নিগূঢ় সন্ধান পেতে এত পথচলা, হাহাকারময় জীবন কতটুকু বুঝতে পারি আমরা? বিপ্লব তো মনের, মননের, একাকিত্ব আর জয়-পরাজয়ের।

ভাঙচুর জীবনের রঙ্গমঞ্চে সবকিছু ভাষাহীন। মুখের বুলি উল্টে যায় মননের বাধা আর স্বার্থের কাছে। পথের মানুষগুলোর আবছায়া মুখগুলো গাণিতিক ভাষায় সরল নয়, উপপাদ্যের বর্ণনার মতো জটিল। স্বরে ‘অ’-তে ফেঁসে যাওয়া জীবন অভিনয়, অপবাদ, অপদস্ত, অপমান, অচ্ছুৎ নামে। তবু বেঁচে থাকায় স্বরকাব্য হয় রায়হান উল্লাহর।

মর্ত্যে সুর-অসুরের খেলায় মানুষ পুতুলসম। বেঁচে থাকায় শিখতে হয়, শিখতেই চলে যায় যাপিত জীবন। শিখতে ভুল, দেখতে ভুল, জল চাইতে আসে দুঃখ, যাতনাময় অনুভূতি, ভালোবাসা শিখতে ভুল হয়ে যায় রায়হান উল্লাহর।

আরও পড়ুন <> গুলতেকিনকে কোন খামে বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়েছিলেন হ‌ুমায়ূন

কবিদের দৃষ্টিসীমা নেই। অনন্ত তাদের দেখা, ভাবনা, জীবনের প্রান্তরে রায়হান উল্লাহ নিজেকে একাকিত্বে সঁপে দিয়েছেন। দেখার তল হারিয়ে কবির ভাবনার কপাটে তালা মেরে অচিনপুরে যাত্রার কথা ভাবেন।

শত গল্প নিয়ে হয় জীবন। সময়, জীবন, মায়া যাতনার বোধ এসে চোখ রাঙায়। যারা চলে গেছে ওপারে ওরা ডাকে। জনম জনম কবি রায়হান উল্লাহর ভাবনার করিডরে জমে থাকে এপিটাফ। চারপাশের মুখগুলো মুখোশে ঢাকা। তাদের ধূর্ত চোখ দেখে ক্লান্ত কবি, চেতনা, মনুষ্যত্বের ক্ষুধা নিয়ে নিজেকে অমানুষ ভাবতে শুরু করেন। মায়াপথিক কাব্যে কবি আশ্রয় খোঁজেন জীবনের চরাচরে। প্রেয়সীর চিবুক, স্রোতোধারা নদী, গোধূলিলগ্ন, ময়ূরাক্ষী, পদ্মফুলের বিলে। আসলে মানুষ কেউ সুখী নয়। চব্বিশ ক্যারেট নিখাঁদ প্রেম নিয়ে নৌকা ভিড়ায় না কেউ কবির জন্য। জীবনের মানে খুঁজতে কবি ভাবুক চেতনায় প্রকৃতির কাছে ফিরে যান। বৃষ্টি ভাবনা, মাঝরাতে সিগারেটের ধোঁয়ায় নিকোটিনের আড়ালে শিৎকার ধ্বনি খোঁজেন কবি। ফিসফিস রোজনামচায় কাছের মানুষটির মায়া চান কবি। ওলটপালট ভাবনার লুকোচুরিতে রায়হান উল্লাহ তুলে ধরেছেন জীবনের চাওয়া-পাওয়া, সর্বোপরি মায়াজলে ডুবে থাকা মনের বন্দিত্ব।

কবিতায় কবি বলে যাবেন তার ইচ্ছের পদাবলি, এখানে থাকবে না নিয়ম, গ্রামার, শাসনের রাঙা চোখ। কবিরা কোনো সূত্র বা ধরা-বাঁধা নিয়ম মানেন না। যেমনটি সব প্রথা দূরে রেখে রায়হান উল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন তার কাব্য ‘মায়াপথিক’।

মায়ার জালে আটকে মানুষ মোহাবিষ্টের মতো চালিয়ে যায় যাপিত জীবন। সেই পথের পথিক হয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকুক নতুনত্বের ঝাঁপি নিয়ে কবি রায়হান উল্লাহর ‘মায়াপথিক’।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ