প্রধানমন্ত্রীকে সাবধান বার্তা দিল রিজভী আহমেদ

প্রধানমন্ত্রীর বাবার নামে দুর্নীতির মামলা ছিল, কারাগারে রাখা হলে তকেও রাজবন্দি বলা হতো। কিন্তু এখন বিএনপি নেতারা কারাগারে গেলে তা হয় না। এটা কোন আইনে বলা আছে জানতে চান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে হুশিয়ারি দিয়েছেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বলে রাখি, প্রত্যেকটা জিনিসের রেকর্ড আছে। 

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়া প্রজন্মদল কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বিএনপির সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির জন্য দিনের আলো যেন নিষিদ্ধ। বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্ত বাতাস গ্রহণ করা থেকে নিষিদ্ধ। এদেরকে সবসময় কারাগারে থাকতে হয়। বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে ঢুকানো, ধরে ফেলা এ কর্মসূচি যেন শেখ হাসিনার শেষই হচ্ছে না। আমার মনে হয় তিনি (শেখ হাসিনা) একটা আতঙ্কের মধ্যে ভুগছেন। এর কারণ হলো, তিনি (শেখ হাসিনা) জানেন তার কোনো জনসমর্থন নেই। জনসমর্থন না থাকলে সেই সরকাররা প্রচন্ড স্বেচ্ছাচারী হয়, ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠে এবং জনগণের আওয়াজ ফেলেই তারা নিপীড়নভাবে সেটাকে দমন করে। সেই জিনিসটা বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বিএনপির ২৫ থেকে ২৬ হাজার নেতাকর্মী একটা ডামি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় চারমাস কারাগারে ছিলেন। 

কয়েক হাজার নেতাকর্মী এখনো কারাগারে বন্দী রয়েছে। এর জবাব কি শেখ হাসিনা দিতে পারবেন? এর জবাব যদি শেখ হাসিনা দিতে পারতেন তাহলে তিনি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতেন। শেখ হাসিনা যেভাবেই হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তিনি (শেখ হাসিনা) আজকে বলেছেন, ‘রাজবন্দী কেউ নেই ; রাজনৈতিক কারণে কেউ বন্দী নেই। যারা বন্দী রয়েছে তারা বিভিন্ন মামলার আসামি।’ 

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী; রাজবন্দী নামে কোনো শব্দ কি আইন গ্রন্থে লেখা আছে? রাজনীতি যারা করে তাদেরকে কারাগারে বিভিন্ন মামলা দিয়েই ঢুকানো হয়। এ রীতি ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে। আপনার বাবা পাকিস্তান আমলে অনেকবার জেলে গিয়েছে। সেখানে আপনার বাবা যে রাজনৈতিক কারণে জেলে গিয়েছে সে কথা লেখা নেই।

সাবেক এ ছাত্রনেত বলেন, গাফফার চৌধুরীর একটা লেখা পড়ে জানতে পেরেছি, পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ১৭ টা দূর্নীতির মামলা দিয়েছিল আইয়ুব খান। কিন্তু, সারাদেশের মানুষ মনে করতো শেখ মুজিবসহ যারা রাজবন্দী রয়েছে তাদের নামে বিভিন্ন মামলা দিয়েই মুলত কারাগারে ঢুকানো হয়। উপমহাদেশে এরকমভাবে অনেকেই কারাগারে গিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধীসহ আরও অনেকেই কারাগারে গিয়েছেন। কিন্তু কোথাও রাজনৈতিক কারণে কারাগারে গিয়েছে সেটা লেখা থাকে না। যারা কায়েমি শাসক গোষ্ঠী তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দিয়ে তাদের নাম দেয়।

আপনি বলছেন তারা (বিএনপির নেতাকর্মী) বিভিন্ন মামলার আসামি। কিন্তু গোটা জাতি মনে করে আপনি ষড়যন্ত্র করে আন্দোলনকামী, গণতন্ত্রকামী, যারা সত্যকথা বলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নাশকতার মামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনি তাদেরকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছেন। যোগ করেন রিজভী আহমেদ।        

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনার নামে ১৫ টি মামলা ছিল। সেগুলো কি রাজনৈতিক কোনও মামলা ছিল? সেগুলো দূর্নীতির মামলা ছিল। আপনি ক্ষমতার জোরে সেটি বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বলে রাখি, প্রত্যেকটা জিনিসের রেকর্ড আছে।      

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট পারভীন কাউসার মুন্নী। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের মহাসচিব মো. সারোয়ার হোসেন রুবেল।

অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, বিএনপির সেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী শপু, সম্প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদ মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির প্রমুখ।

আপন দেশ/এবি