Apan Desh | আপন দেশ

বিএনপির ৭ এমপি: শুল্কমুক্ত গাড়ী বিক্রির টাকা আত্মসাৎ, আরও যত সুবিধা নিয়েছেন...

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৬:২৪, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

বিএনপির ৭ এমপি: শুল্কমুক্ত গাড়ী বিক্রির টাকা আত্মসাৎ, আরও যত সুবিধা নিয়েছেন...

ফাইল ছবি

একজন সংসদ সদস্য প্রতিমাসে বেতন-ভাতাসহ দুই লক্ষাধিক টাকার সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেই হিসেবে বিরোধী দল বিএনপি’র সদস্যরা গত চার বছরে সেই সুবিধা নিয়েছেন। একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম ছাড়া বাকী ৬ জন সংসদ সদস্য ঢাকায় এমপি হোষ্টেলে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন।

সংবিধানের ৬৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংসদের আইন দ্বারা কিংবা অনুরূপভাবে নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত হইবে, সংসদ-সদস্যগণ সেইরূপ ৮ (পারিশ্রমিক), ভাতা ও বিশেষ-অধিকার লাভ করিবেন।’ সেই হিসেবে সর্বশেষ জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রেমুনারেশন অ্যান্ড অ্যালাউন্সেস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন-২০১৬’ অনুসারে সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা ও আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের মাসিক বেতন ৫৫ হাজার টাকা। তারা প্রতিমাসে নির্বাচনী এলাকার ভাতা ১২ হাজার ৫০০ টাকা, সম্মানী ভাতা ৫ হাজার টাকা, পরিবহন ভাতা ৭০ হাজার টাকা, নির্বাচনী এলাকায় অফিস খরচ ১৫ হাজার টাকা, লন্ড্রি ভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, ক্রোকারিজ ও টয়লেট্রিজ খরচ ৬ হাজার টাকা এবং ৭ হাজার ৮০০ টাকা টেলিফোন ভাতা পেয়ে থাকেন। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বার্ষিক ভ্রমণ খরচ এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও স্বেচ্ছাধীন তহবিল বার্ষিক পাঁচ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন<<>> বিএনপির এমপিরা কী সুবিধা নিয়েছেন তার তথ্য চেয়ে আইনি নোটিশ

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগে সংসদ সদস্যদের জন্য রাজধানীতে প্লট বরাদ্দের রেওয়াজ থাকলেও চলতি সংসদে তা বন্ধ রয়েছে। রাজউকের প্লট খালি না থাকায় এই বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেল রয়েছে। বিএনপি’র ৬ জন সংসদ সদস্য সেখানে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছে। এরমধ্যে বগুড়া-৬ আসনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নাখালপাড়া এমপি হোষ্টেলে ৩নং ভবনের ৫০২ নং ফ্ল্যাট, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন মানিকমিয়া এভিনিউস্থ ৪নং সংসদ সদস্য ভবনের ২০৪ নং ফ্ল্যাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার নাখালপাড়া এমপি হোষ্টেলে ২নং ভবনের ৩০৩ নং ফ্ল্যাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ মানিকমিয়া এভিনিউস্থ ৫নং সংসদ সদস্য ভবনের ৬০৩ নং ফ্ল্যাট, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ মানিকমিয়া এভিনিউস্থ ২নং সংসদ সদস্য ভবনের ২০৪ নং ফ্ল্যাট এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা নাখালপাড়া এমপি হোষ্টেলে ৩নং ভবনের ৩০৩ নং ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন।

সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্তভাবে গাড়ি আমদানির সুবিধা রয়েছে। তবে এই সংসদের কোন কোন সদস্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করেছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারি সচিব মো. আব্দুল মোত্তালিব। তিনি আপন দেশ ডটকম’কে বলেন, চলতি সংসদের শুরুতে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির জন্য অনেকেই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন কোন সদস্য আমদানি করেছেন, সেটা সংসদ সচিবালয়ের নথি দেখে বলতে হবে।
সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যরা বেতন-ভাতা ও আবাসিক সুবিধা ছাড়াও প্রতিবছর চার কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। এই থোক বরাদ্দের টাকা একজন সংসদ সদস্য তার নিজের পছন্দ মতো উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করতে পারেন। তিনি কোন প্রকল্পে এ টাকা খরচ করবেন সেটি সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার। এছাড়া একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হিসেবে পরিচিত। এমপিদের তত্ত্বাবধায় স্থানীয় পর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বয়স্ক ভাতা, নানা ধরণের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীসহ প্রায় ৪০ ধরণের প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে কারা সুবিধা পাবেন সেটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এছাড়া এলাকার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সহ নানা ধরণের প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা থাকে।
 

শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে তা বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ

শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে তা বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ মামলায় বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিলো আদালত। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে হারুন অর রশীদকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল হারুন অর রশীদ সংসদ সদস্য হিসেবে কোটায় শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করেন। এর এক সপ্তাহ পরই শুল্কমুক্ত গাড়িটি তিনি বিক্রি করে দেন। গাড়িটি তিনি স্কাই অটোসের মালিক ইশতিয়াক সাদেকের মাধ্যমে ক্রেতা মো. এনায়েতুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। গাড়িটির ইনভয়েস মূল্য ১১ লাখ ৬৪ হাজার ১১০ টাকা। শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করে শর্ত ভঙ্গ করে তা বিক্রি করায় সরকারের ৮৭ লাখ ৭১ হাজার ৬১২ টাকার শুল্ক বাবদ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এসআই মো. ইউনুচ আলী বাদী হয়ে রাজধানীর পল্লবী থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মোনায়েম হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে এ চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। এর এক মাস পরই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন। বিচার শেষে ওই রায় দেন আদালত। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণ নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি পাঁচজনই শপথ নেন। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেয়ায় মির্জা ফখরুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করে আবার নির্বাচন হয়। পরে ওই আসনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী জিএম সিরাজ। এরপর সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হন রুমিন ফারহানা। যারা ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশে জনসভায় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

বোরবার (১১ ডিসেম্বর) স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দেন। স্পিকার তখন পাঁচ জনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং ওই পাঁচটি আসন শূন্য হয়েছে বলে জানান। বাকি দুজনের একজন উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া অসুস্থ থাকায় তার আবেদন যাচাই করার পর গ্রহণ করার কথা জানিয়েছিলেন স্পিকার। আর হারুন অর রশীদ বিদেশে থাকায় তার পদত্যাগপত্র আপাতত গ্রহণ করা হয়নি। সন্ধ্যার মধ্যে আব্দুস সাত্তারের পদত্যাগের আবেদন যাচাই শেষে গ্রহণ করা হয়। এরপর রাতে সংসদ সচিবালয় থেকে ছয়টি আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে। 

আপন দেশ ডটকম/ এবি
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়