Apan Desh | আপন দেশ

সবজি ছাড়া বাজারে সুখবর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২৯ মার্চ ২০২৪

সবজি ছাড়া বাজারে সুখবর নেই

ফাইল ছবি

মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অর্ধেক শেষ। এখনো বাজারে স্বস্তি ফেরেনি। রোজার শুরু থেকেই গরু, মুরগি, খাসিসহ সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েই যাচ্ছে। বাড়তি আছে মাছের দামও। গত সপ্তাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সবজির দামে।

এ ছাড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, আলু ও তেলের দামও উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। এতে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিম্ন এবং মধ্যবিত্তদের। গত দুই সপ্তাহ থেকে বেড়ে যাওয়া চালের দাম এখনো কমেনি। এ ছাড়া ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের খবরে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম প্রায় ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

এদিকে, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও তার খুব বেশি সুফল বাজারে মিলছে না। রোজার মধ্যে ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এসব পণ্যের অধিকাংশই এখনো বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে।

প্রথমদিকে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি থাকলেও এখন ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি খাসির মাংস। পাশাপাশি কিছুদিন ধরে ২২০ টাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া গেলেও এখন তা বেড়ে ২৩০ টাকা হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। গত কয়েক দিন ২১০ থেকে ২২০ টাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হলেও, আজ তা বেড়ে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। সেই সঙ্গে অন্য সব ধরনের মুরগির দামও বেড়েছে বাজারে।

বাজারে সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়, কক মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যদিকে রমজানের শুরু থেকে বেড়েই যাচ্ছে গরুর মাংসের দাম। যদিও প্রথমদিকে কোথাও কোথাও গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেশিরভাগ জায়গায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম রাখা হচ্ছে ১১০০ টাকা। 

প্রতি কেজি চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। আকারভেদে চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। চাষের কই মাছের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

বাজারে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া যেসব মাছ বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। আইড়, দেশি শোল ও মাগুরের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। ৫০০ গ্রাম ওজনের বেশি ইলিশের দাম এক হাজার টাকা কেজি। তবে, বিক্রেতারা বলছেন মাছের বাজার প্রতিদিনই ওঠানামা করছে। এক দিন দাম কিছুটা কমলেও আরেক দিন বাড়ছে। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রুই মাছের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ইলিশের দাম বেড়েছে। টিসিবি বলছে, প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চালের কেজি গত এক সপ্তাহে দুই টাকা বেড়ে ৫২ টাকা হয়েছে। আর সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগে যে মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫০-৫১ টাকা ছিল তা এখন ৫২-৫৩ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর–২৮) কেজি ৫৫-৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭-৬০ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬২-৭৮ টাকা থেকে বেড়ে ৬৪-৮০ টাকা হয়েছে।

অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজার গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিম্নমুখী ছিল। এ মাসের শুরুতেও সরকারিভাবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে ও হালি জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় ১২০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দর ৬০ টাকায় নামতে দেখা যায়। কিন্তু হুট করে নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৩ মার্চ বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

আরও পড়ুন <> নওগাঁর টুপির চাহিদা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে

ওই নিষেধাজ্ঞার খবরকে পুঁজি করে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ২০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।

অন্যদিকে আলুর বাজারে সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকার মতো। তবে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে আরও বেশি; ১২ থেকে ১৫ টাকা। কারণ পেঁয়াজের মতোই মাসখানেক আগে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল আলুর দর। প্রতি কেজি নেমেছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। কিন্তু কিছুটা বেড়ে গত সপ্তাহে আলু বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। এখন দাম আরও বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

মালিবাগ বাজারে কথা  বেসরকারি চাকরিজীবী রেজাউল করীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম এত বাড়তি যে, কিনে খাওয়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রমজান মাস আসলে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়া হয়, অথচ আমাদের দেশে কে কত বেশি দাম নিতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা চলে। ব্যবসায়ী, অসাধু  সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি। তিনি বলেন, সব মাংসের দাম বেশি কোনোমতে ব্রয়লার মুরগি কিনে মাংসের চাহিদা পূরণ করে মানুষ। অথচ সেই মুরগির দামও আজ বাড়তি।

মগবাজার পেয়ারাবাগ বাজারে রুহুল আমিন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ৭৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস, যা অবশ্যই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কিছুদিন আগে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নাটক করে ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, সেই মাংসই এখন সব জায়গাতেই ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মুরগির বাড়তি দামের বিষয়ে বনানী কাঁচাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। তাই বাড়তি দাম দিয়ে আমাদেরও মুরগি কিনতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে যখন দাম বৃদ্ধি পায় তখন খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। 

রামপুরার একটি গরুর মাংসের দোকানের বিক্রেতা আজাহার আলী বলেন, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা কেজি দরে আজ বিক্রি করছি। তারপরও লাভ হচ্ছে না। কারণ গরুর দাম, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতনসহ সব খরচ দিয়ে লাভ থাকেই না। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের অনেক গরুর মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। 

ভোক্তা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘দাম বেঁধে দেয়ার সরকারি উদ্যোগটি ভালো ছিল। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই আমাদের সংশয় ছিল। কারণ, বেঁধে দেয়া দাম কার্যকর না হলে ক্রেতার কোনো লাভ নেই।’

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তাই দাম নির্ধারণ না করে দিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও কার্যকরী করে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। প্রয়োজনে নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।’

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, ‘যেখানে যেখানে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তা করা হবে। পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার আগে তিন মাস ধরে আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করেছেন।’ 

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়