Apan Desh | আপন দেশ

পাকিস্তানে ক্ষমতায় আসছেন নওয়াজ-বিলাওয়াল!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পাকিস্তানে ক্ষমতায় আসছেন নওয়াজ-বিলাওয়াল!

নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি

পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হলেও পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সর্বশেষ প্রকাশিত ফলাফলে এটুকু প্রায় নিশ্চিৎ এককভাবে সরকার গড়তে প্রয়োজনীয় আসন কোনো দলই পাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে জোট সরকার গড়তে ঐকমত্যে পৌঁছেছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। 

পিএমএলএন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল। আর পিপিপির প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টার সন্তান।

পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পিএমএলএনের মধ্যে। যদিও আইনি প্রতিবন্ধকতার কারণে পিটিআই দল হিসেবে নির্বাচন করতে পারেনি। এই দলের সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে পিটিআই ও পিএমএলএন— দুই দলই নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছে। এ পরিস্থিতিতে জোট গড়ে ক্ষমতায় যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন নওয়াজ শরিফ।

পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও তার বাবা পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন পিএমএলএনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ। এ সময় শাহবাজ শরিফ ‘পাকিস্তানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে’ পিপিপির শীর্ষ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মহসিন নাকভির বাড়িতে এই বৈঠক হয়। বৈঠক–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জিও নিউজের খবরে বলা হয়, বিলাওয়াল ও আসিফ জারদারির সঙ্গে শাহবাজ শরিফের বৈঠকে জোট বেঁধে কেন্দ্রে ও পাঞ্জাবে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ৪৫ মিনিট ধরে চলা বৈঠকে পিপিপির শীর্ষ নেতাদের কাছে নওয়াজ শরিফের বার্তা পৌঁছে দেন শাহবাজ। সেই সঙ্গে তিনি ভবিষ্যতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য পিপিপি ও পিএমএলএনের নেতাদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানান।

কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে জোট বেঁধে ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল নির্ধারণ করতে দুই দলের নেতারা অবিলম্বে আলোচনায় বসবেন বলেও সম্মত হয়েছেন শাহবাজ ও জারদারি।

এদিকে নির্বাচন ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনীর। শনিবার নির্বাচনের পর এক সামরিক বিবৃতি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। খবর ডনের।

আরও পড়ুন <> ইমরান-সমর্থিত প্রার্থীদের জয়জয়কার

সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বলেন, পাকিস্তানকে নির্বাচনপরবর্তী ‘নৈরাজ্য ও মেরুকরণ’ থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানকে নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতি বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আসিম মুনির বলেন, জাতির নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্থিতিশীল হাত এবং একটি নিরাময় স্পর্শ প্রয়োজন।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ২৬৬টি আসনে সরাসরি ভোট হয়। নির্বাচনের আগে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন প্রার্থী নিহত হওয়ায় একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল আগেই। ফলে ভোট হয়েছে ২৬৫টি আসনে। এককভাবে সরকার গঠন করতে কোনো দলকে ১৩৪টি আসনে জিততে হবে।

পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সর্বশেষ ফল অনুযায়ী, আজ শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থিরা এগিয়ে রয়েছেন। 

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে না পারলেও এবার দেশটির জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবাই পিটিআইয়ের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে লড়েছেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২৫০টি আসনের প্রাথমিক ফলাফলে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন। আসনসংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএলএন। তৃতীয় স্থানে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি।

পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৬৫টি আসনের মধ্যে ২৫০টি আসনের ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই পিএমএলএন ৭১টি আসনে, পিপিপি ৫৩টি ও এমকিউএম ১৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১০টি আসন।

শুক্রবার রাতে লাহোরে নিজ বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন নওয়াজ শরিফ। সেই ভাষণেই পিএমএলএনের বিজয় ঘোষণা করেন ৭৪ বছর বয়সী এই নেতা।

নওয়াজ বলেন, ‘আজ আরও একবার প্রমাণিত হলো যে একক দল হিসেবে পাকিস্তান মুসলিম লীগ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো— নানা সংকটের যে ঘূর্ণিতে বর্তমানে আমাদের দেশ রয়েছে, সেখান থেকে পাকিস্তানকে উদ্ধার করা।’

নিজ বক্তব্যে পিটিআইয়ের নাম উল্লেখ না করে দলটির বিজয়ী প্রার্থীদের পিএমএলএনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন নওয়াজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র কিংবা দলীয় প্রার্থী, যারা এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন, তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে পিএমএলএনের পক্ষ থেকে তাদেরকে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য দাওয়াত দিচ্ছি। পাকিস্তান বর্তমানে ব্যাপক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং এই দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে হলে তাদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’

এদিকে নওয়াজ শরিফের ভাষণ দেয়ার অল্প সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইমরান খানের একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল রেকর্ড পোস্ট করে পিটিআই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এআই) সহায়তায় প্রস্তুত করা সেই ভিডিওতে ৭১ বছর বয়সী এই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার প্রিয় পাকিস্তানবাসী, আমি আপনাদের ওপর আস্থা রেখেছিলাম এবং দলে দলে ভোট প্রদানের মাধ্যমে আপনারা সেই আস্থার সম্মান জানিয়েছেন। যেভাবে আপনারা পিটিআইকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তা সবাইকে স্থম্ভিত করে দিয়েছে।’

নওয়াজ শরিফ এবং তার ভাই হামজা শরিফকে কটাক্ষ করে ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। নওয়াজ শরিফ সবসময়ই জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। এবারো (পিএমএলএনকে বিজয়ী ঘোষণা করার মাধ্যমে) তিনি তা ই করছেন। তারা আমাদের চেয়ে এখনো ৩০টি আসন পিছিয়ে আছে, অথচ দাবি করছে যে তারা বিজয়ী হয়েছে। পাকিস্তানবাসী, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। দুই বছর ধরে আপনাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তার জবাব আপনারা দিয়েছেন। এখন আপনারা উদযাপন করুন। আল্লাহ মহান। পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬টি আসনে সরাসরি ভোট হয়। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়