Apan Desh | আপন দেশ

নির্বাচনের আগে হঠাৎ আলোচনায় তিস্তা প্রকল্প

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ২১:২৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪

নির্বাচনের আগে হঠাৎ আলোচনায় তিস্তা প্রকল্প

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে চলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন। নির্বাচনের ধরন নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদের অবস্থান বিপরীতমুখি। এ নিয়ে খুনোখুনিও হয়েছে। অতীতের যেকোনো সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব মোড়লরা নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করছে বলে দাবি খোদ সরকার প্রধানের। 

ওদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমারা বাঁকা নজরে তাকিয়ে আছে। টানা তিনবারের শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি দৃশ্য-অদৃশ্যমান নানামুখি চাপ সৃষ্টি করছে। ভিসানীতির আওতায় নিষেধাজ্ঞার মতো খড়গ ঝুলিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

গুম-বিচারবহির্ভুত হত্যার (ক্রসফায়ার) অভিযোগ এনেছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে। সংস্থাটির প্রধানসহ অর্ধডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বছরখানেক তা কার্যকরও হয়েছে।

দেশের ব্যবসায়ীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের ধারণা এই নির্বাচন পশ্চিমাদের মতপুত না হলে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। ঢাকারবুকে টপ টু বটম এমন হাওয়া বইছে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে বছরধরে মতামত দিয়ে আসছে পশ্চিমারা। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তারা বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমুলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। নিজ দেশের বার্তা বইয়ে বেড়াচ্ছেন মার্কিনের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ঘুরেছেন বড় দলগুলো অফিসে অফিসে।

এদিকে পিটার হাসের কথা আর বিরোধীদের চাওয়ার সঙ্গে অনেকটাই মিল। ফলে মার্কিনের প্রতি অনেকটাই বিরাগ ক্ষমতাসীনরা। সরকার প্রধান বলেছেন, ‘বিশ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে, ঐ আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেই মহাদেশের সাথে মহাসাগরেই আমরা যাতায়াত করবো আর বন্ধুত্ব করবো।’ যদিও কিছুদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিনের সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

আরও পড়ুন<<>> ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ চিন্তিত নয়, আল-জাজিরাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গত ১৫ নভেম্বর তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ। আয়োজন প্রায় শেষের পথে। নির্বাচনের আগে নতুন দল গঠন, নেতা বাগানোর মতো পুরনো রেওয়াজ এবারও দেখা গেছে।

বিরোধীদলগুলো বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘না’ বলে আসছে গোড়া থেকেই। দাবি করে আসছে সরকারের পদত্যাগের। দাবি পূরণ হয়নি। তাই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়; ভোট ঠেকানোর জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করছে সরকার বিরোধীরা।

ভোট ঠেকানোর কর্মসূচির আগে-পরে বাস-ট্রেন পুড়ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। এর জন্য সরকার ও বিরোধীরা পরস্পরকে দোষারোপ করছে।

দেশের অভ্যন্তরের ঘটনা হলেও পুরোপুরি, দোষাদোষী ঠেকেছে জাতিসংঘে। উভয় পক্ষকে সংযত হবার আহ্বান জানিয়েছে ওই সংঘ।

আরও পড়ুন<<>> ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ড কাউকেই না’

ঢাকার এমন পরিস্থিতিতে প্রথমে চুপ থাকলেও মুখ খুলছে প্রতিবেশী ভারত, বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এবং বিনিয়োগকারী দেশ চীনও। তবে তাদের অবস্থানকে দেশবিরোধী বলে দাবি করছে সরকার বিরোধীরা। বিএনপি বলছে, রাশিয়া, চীন-ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্খার বিপরীতে। তারা সরকারের পালে হাওয়া দিচ্ছে। ভারত সরাসরি গত দুটি নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছে। 

চীন-ভারত। সাপ-নেউলে খ্যাত। এতদিন তাদের এক ঝুড়িতে রেখেছিলেন দীর্ঘ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নির্বাচনের বাকি ৯দিন। সব কিছু ঠিক থাকলে শেখ হাসিনা হচ্ছেন পঞ্চমবারের প্রধানমন্ত্রী। এমনটি প্রায় নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্যে  ফিতায় বাধা ফাইলের ফর্দ বাইরে আসছে। অপ্রকাশিত অনেক কথাই ফাঁস হচ্ছে। এর মধ্যে একটি তিস্তা প্রকল্প। 

তিস্তা নদীর উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ২১ ডিসেম্বর বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে তিস্তা নদীবিষয়ক কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছি। ৭ জানুয়ারি ভোটের পর তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবো। 

বেইজিংয়ের এমন তথ্য পেয়ে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা ভারতের। কারণ চীন যেখানে তিস্তার কাজ করবে, তার থেকে শিলিগুড়ি করিডোর খুব দূরে নয়। শিলিগুড়ি করিডোরকে ভারত ‘চিকেন নেক’ নামেও অভিহিত করে। দেশটি মনে করে, তিস্তা উন্নয়ন কাজের নামে চীন এটাকে নিজেদের কবজায় নিতে চায়। এ কারণে ভারত তার চিকেন নেকের সামনে চীনের উপস্থিতি দেখতে চায় না।

তাহলে কী করবে ঢাকা? বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। বলেছেন, তিস্তা প্রকল্পে চীনের প্রস্তাবে ভারতের আপত্তি থাকলে ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় এগোতে হবে। 

মুখপাত্রের জবানির কয়েক ঘণ্টা পরই গণমাধ্যমে আসেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের ভূমিকে আমরা কখনও ব্যবহার করতে দেব না। সেটা যদি আমাদের প্রতিবেশী বা অন্য কারও বিরুদ্ধে যায় অথবা অন্য কারও স্বার্থের ব্যাপারও থাকে, তারপরও দেব না। এ ব্যাপারে আমরা ক্লিয়ার। আমরা সব ধরনের যুদ্ধের বিপক্ষে।

বিশ্লেষকদের মতো এখন সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন-তাহলে ভারতকে তুষ্ট রাখতে চীন থেকে সরে আসছে ক্ষমতাসীনরা? নাকি অন্য কিছু? 

আপন দেশ/এবি/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়