Apan Desh | আপন দেশ

মসজিদে অবৈধ দোকান নির্মাণ, কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য!

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১২ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ২১:২৪, ১২ আগস্ট ২০২৩

মসজিদে অবৈধ দোকান নির্মাণ, কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য!

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মুসল্লিরা

রাজশাহী: নগরীর লক্ষ্মীপুর চৌরঙ্গী জামে মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, মসজিদের প্রথম তলায় (প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে যেখানে নামাজ আদায় করা হতো তদস্থলে) ২৬টি দোকান ঘর নির্মাণ করে পজিশন বিক্রি এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে কমিটির কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে। সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা-পরামর্শ ছাড়াই এবং বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করেই মসজিদের জায়গায় দোকান বনিয়ে পজিশন হস্তান্তর করা হয়েছে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না নিয়েই এরই মধ্যে ৭ তলা মসজিদের চার তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় একজন মুসল্লিকে শারীরিকভাবে হেনস্তাসহ অন্যান্য মুসুল্লিদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন কমিটির সভাপতিসহ তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলাও করেছেন কয়েকজন মুসল্লি।

এ ঘটনায় শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সাধারণ মুসল্লিদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুসল্লি আমিনুর রহমান বাচ্চু।  

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মুসল্লি মুসা কলিমুল্লাহ, আরিফ উদ্দিন, সাদেম আলী, নজরুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, সুলতান আহমেদ, জালাল উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রহিম, শহিদুল ইসলাম, ফরহাদ আলম, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইসলামিক স্কলাররা ফতোয়া দিয়েছেন, মসজিদের যে স্থানে একবার সালাত আদায় ও সিজদা করা হয়েছে, সেই স্থানের ওপরে না নিচে কিয়ামত পর্যন্ত কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান তথা দোকান ঘর নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। যারা এই বিধান অমান্য করবে তারা সরাসরি জাহান্নামে যাবে এবং দুনিয়াতেও জিল্লোতির জীবন পার করবে। তাই আমরা মুসলমান হিসাবে কোনোভাবেই তাদের অবৈধ কার্যকলাপ মেনে নিতে পারি না। ঈমান বাঁচানোর তাগিদে ও মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা সাধারণ মুসল্লিগরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনতিবিলম্বে মসজিদের এই অবৈধ কমিটির অপসারণ দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কমিটির সদস্যরা নকশা অনুমোদন ছাড়াই সাততলা বিশিষ্ট মসজিদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করছেন। সেই সঙ্গে মসজিদের নিচতলায় অবৈধভাবে ২৬টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। কমিটির কতিপয় নেতা দোকান বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন। সম্প্রতি কয়েকজন মুসল্লি মসজিদ কমিটির এসব বেআইনি কাজের প্রতিবাদ জানালে তাদের মারধর করা হয়েছে।এসই সঙ্গে হত্যারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

তারা জানান, মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আমিনুর রহমান বাচ্চু গত ২০ জুলাই কমিটির সভাপতি ডা. ইকবাল বারীসহ ৮ জনের নামে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন। এছাড়া মসজিদের নির্মাণকাজ যাতে আইনসম্মতভাবে করা হয়, তার জন্য রাজশাহীর সিভিল আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, তিন একজন মুসল্লি হিসেবে লক্ষ্মীপুর চৌরঙ্গী মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি, যারা মসজিদ কমিটির বিভিন্ন পদের নেতা। সাততলা চৌরঙ্গী মসজিদটির নির্মাণকাজ বেআইনিভাবে চলছে। আসামিরা কোনো প্রকার নকশা বা বিধিবদ্ধ প্ল্যান ছাড়াই মসজিদের নিচতলায় ২৬টি দোকানঘর নির্মাণ করেছেন।

মসজিদটিতে আগে নিচতলায় নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন মুসল্লিরা। গত ১৭ জুলাই মাগরিবের নামাজের পর মুসল্লিরা কোনো নকশা অনুমোদন ছাড়াই মসজিদের নিচতলায় ২৬টি দোকানঘর নির্মাণ ও বিক্রির প্রতিবাদ করেন। এসময় আসামিরা কয়েকজন মুসল্লির ওপর হামলা চালান। এতে বাচ্চুসহ তিন মুসল্লি আহত হন। এ হামলার সাথে মসজিদ কমিটির সভাপতি ডা. ইকবাল বারী এবং শফিকুজ্জামান সুজন, আনসারুল হক খিচ্ছু, মাসুদ খান রানা ও রফিকুল ইসলাম জড়িত বলে অভিযোগ করেন মুসল্লিরা।

অভিযোগকারী মুসল্লিরা বলেন, চৌরঙ্গী রাজশাহীর একটি পুরোনো মসজিদ। পশ্চিম প্রান্তে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভবন নির্মাণের সময় মসজিদের দেয়ালে ফাটল ধরে। মসজিদ কমিটি মামলা করলে পপুলার ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। আগের পাঁচতলা মসজিদটি ভেঙে বর্তমানে সাততলা করা হচ্ছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হলেও কোনো নকশার অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

ছাড়পত্রে বলা হয়েছে, নিচতলায় কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু মসজিদ কমিটি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে নিচতলায় ২৬টি দোকান ঘর নির্মাণ করে। এসব দোকানের একেকটি ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এমনকি মসজিদ কমিটির সভাপতি ইকবাল বারী ও তার স্ত্রী তানজিলা আলমসহ কমিটির সদস্যরা একটি করে দোকান নিয়েছেন। কমিটির সদস্যরা মুসল্লিদের মতামত উপেক্ষা করে এসব নির্মাণের পর দোকান ভাগাভাগি করেছেন। মুসল্লিরা আপত্তি করাতেই এই হামলার ঘটনা ঘটে।

কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদের নিচতলার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশপথে দুইদিকের দোকানের মাঝখান দিয়ে সংকীর্ণ একটি পথ রাখা হয়েছে। মুসল্লিদের মসজিদে প্রবেশের মূল পথ এটি। অনেক প্রবীণ মুসল্লি এতদিন নিচতলায় নামাজ আদায় করতেন। নিচতলায় মার্কেট হওয়ায় তাদের দুই বা তিনতলায় উঠতে হবে। বৃদ্ধ মুসল্লিদের জন্য এটা কষ্টের ও বিড়ম্বনার। নিচতলার দুই পাশে দোকানপাট হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে সেখানে মানুষের ভিড় থাকবে। এই ভিড় ঠেলে মুসল্লিদের মসজিদের ওপরে উঠতে হবে। এতে মুসল্লিদের ভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হবে।

মামলা দাখিলকারী আইনজীবী মজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আদালত মসজিদ কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মসজিদ স্থাপনার নকশাও পেশ করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌরঙ্গী মসজিদ কমিটির সভাপতি ডা. ইকবাল বারী মুসল্লিদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, নকশা অনুমোদন নিয়ে মসজিদের কাজ হচ্ছে।

তবে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, চৌরঙ্গী মসজিদ প্ল্যানের জন্য একটি আবেদন এসেছে। কিন্তু এখনো অনুমোদন হয়নি। মসজিদ কমিটি যে নির্মাণকাজ করছে, তা সংশোধন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আপন দেশ/এমএমজেড

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়